• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

ফুলবাড়ীতে ভরা বর্ষা কালে বৃষ্টির দেখা নেই

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২, ০৮:২৯ এএম

ফুলবাড়ীতে ভরা বর্ষা কালে বৃষ্টির দেখা নেই

ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি

সাম্প্রতিক কালে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। এতে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে মাঠ-ঘাট। আমন ধান রোপণের সময় বিলম্ব হয়ে পড়ছে। 


ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করার চিন্তা করছেন। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষা ঋতু। আষাঢ় মাসে মাঠ-ঘাট বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর থাকে। কৃষক আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেন। সাধারণত আষাঢ় মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে এই অঞ্চলের কৃষকরা আমন রোপান করতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু এবার আকাশের কোন বৃষ্টি নেই। তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি চলছে। না হওয়ায় অনেক জমিতে সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। 


এতে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৩৪,ব্রি-৪৯, সম্পা কাটারী, ব্রি-৯৩, ৯৪, সোনামুখি, রঞ্জিত, এবং হাইব্রিড জাতের টিয়া, ধানিগোল্ড, এজেড ৭০০৬ জাতের রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়ে থাকে। এবছর এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় মোট ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৬১ হাজার ৯১৬ মেট্রিকটন রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বীজতলা রোপনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৯শ হেক্টর জমিতে, যা ইতিমধ্যে পুরণ হয়েছে।


প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক। কিন্তু এবার মাসব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে অনেক কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না।


উপজেলার পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের কৃষক দুলাল রায় বলেন, ফুলবাড়ীতে আষাঢ় মাস জুড়েই চললে খরা। ১৫ আষাঢ় থেকে আমন রোপা লাগা শুরু হয়। তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন লাগাবেন। বীজতলা রেডি কিন্তু বৃষ্টি অভাবে জমি প্রস্তুত করে আমন রোপা লাগাতে পারছেন না। আমন রোপনে দেরী হলে ফলন কম হবে। তবে আকাশের বৃষ্টি না হলে বিকল্প সেচ দিয়ে রোপা লাগাতে হবে। তাতে খরচ বেশী হবে।


কৃষক কমল রায় ৪ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। বৃষ্টির কারণে জমিতে হাল দিয়ে প্রস্তুত করতে পারছেন না এবং রোপা লাগাতেও পারছেন না। খরার কারণে বীজ তলা রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন মাত্র।


সুজাপুর গ্রামের কৃষক অসিস রঞ্জন দাস বলেন, তিনি ১৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। আষাঢ় মাসের আজ ৩০ তারিখ শেষ দিন। এখনও বৃষ্টি নেই। তাই তিনি শ্যালো মেশিন প্রস্তুত করছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে আমন জমি প্রস্তুত এবং রোপন শুরু করবেন।


তিনি আরও বলেন, ‘তার নিজের ১৩ বিঘা জমি ছাড়া অন্যের জমিতে প্রতি ঘন্টায় ১০০ টাকায় পানি সরবরাহ করবেন। উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে ধান রোপণের চিন্তা করছেন।


সেচ দিয়ে ধান লাগানোর ফলে আমন উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে বলেও কৃষকরা বলছেন। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) জেলায় তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। জেলায় চলতি মাসে ১৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 


এসময়ে বিগত বছরে ১৫৫ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হবে এবং তা বৃদ্ধি পাবে।


বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহানুর রহমান বলেন, সাধারণত আষাঢ় মাসের ২০ থেকে শ্রাবণ মাসের শেষ পর্যন্ত রোপা আমন চাষাবাদ করা হয়। অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকদের সামান্য অসুবিধা হলেও তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন মোটা ধানের জন্য একটু অসুবিধা হলেও চিকন জাতের ধান একটু দেরিতে রোপন করলেও তেমন ক্ষতি হবেনা। এখনও সময় আছে যদি দুই এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হয়, তবে প্রয়োজনে গভীর নলকূপ গুলো চালু করার

জন্য বলা হবে।


এইচএ 


দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ