• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

ছাগলের চামড়া ৫ টাকা পিস! গরুর চামড়া ২০০-৫০০ টাকা

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২২, ০৮:৪৪ এএম

ছাগলের চামড়া ৫ টাকা পিস! গরুর চামড়া ২০০-৫০০ টাকা

ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছাগলের চামড়া ৫টাকা পিস! ক্ষেত্র বিশেষ কোথাও ছাগলের চামড়া ফ্রি কিংবা কেউ ছাগলের চামড়া কেনার কেউ ছিল না। তবে গরুর চামড়া আকার ভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পিস দরে বিক্রি হয়েছে। 


ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা দীর্ঘ সময়েও না পাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের।


রোববার (১০ জুলাই) সকালে ঈদুল আজহার নামাজের পরই শুরু হয় পশু কোরবানি। দুপুরের পর মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে শুরু করেন। তবে এবার ছাগলের চামড়া কিনতে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। ফলে অনেকেই ছাগলের চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।


উপজেলার দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ি মাজহারুল ইসলাম। গ্রামে ঘুরে ঘুরে ৬০ পিস ছাগলে চামড়া কিনেন ৮০০ টাকায়, বিকেলে ফুলবাড়ীর চামড়া আড়তে বিক্রি করতে এলে চামড়া বিক্রিতে বাঁধে বিপত্তি। কোন ব্যবসায়ীই ছাগলের ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখান না। অনেক ঘুরে এক চামড়া ব্যবসায়ি মাজহারুলের ৬০ পিস ছাগলের চামড়া ক্রয়ে সম্মত হন। তবে দাম বলেন ৬০ পিস চামড়া ৩০০ টাকা; অর্থাৎ প্রতি পিস চামড়ার দাম ৫ টাকা! উপায় না পেয়ে মাজহারুল ৩০০ টাকায় ৬০ পিস চামড়া লসে বিক্রি করে দেন। এসময় তিনি বলেন, পিসে বিক্রি না করতে পারলে চামড়া গুলো নদীতে ফেলে দিতে হতো।


জানা যায়, সঠিক দাম ও বকেয়া টাকা না পেয়ে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন ফুলবাড়ীর অন্তত ১৫ জন চামড়া ব্যবসায়ি। সে কারণে এক সময়ের জমজমাট পশুর চামড়ার বাজার এখন প্রায় সারা বছরই থাকে জনশূন্য। কোরবানিকে ঘিরে পৌরশহরের নিমতলা মোড়, হাসমিপট্টি ও চামড়া গুদাম এলাকায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হলেও ব্যবসায়িদের কাছে যথেষ্ট পুঁজি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা নেই বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।


ফুলবাড়ীতে চামড়া ব্যবসায়ি শমসের আলী জানান, ‘কোরবানী আকার ও প্রকার ভেদে গাভীর চামড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং আড়িয়া গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কিছু চামড়া কিনে আড়ৎদার কাবির হোসেনের কাছে বিক্রি করেছেন।’


ছাগলের চামড়ার ক্রেতা না থাকায় এক টাকা দিয়েও কেউ ছাগলের চামড়া কেনেনি। ফুলবাড়ীর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত বছর সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকা কমে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করেন। বাধ্য হয়ে সেই দামেই চামড়া বিক্রি করতে হয়। তাই সরকার দাম বাড়ালেও আমাদের কোনো লাভ নেই। ট্যানারী মালিকরা যা নির্ধারণ করবেন তাই সঠিক এর বাহিরে কোন কিছু করার থাকে না। ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া থাকায় অনেকেই পথে বসেছেন। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।


ফুলবাড়ী চামড়া ব্যবসায়ী কাবির হোসেন বলেন, ফুলবাড়ীতে বছরজুড়ে গরু ও ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হতো। শুধু কোরবানির সময় এই বাজারে ১৫ থেকে ২০ হাজার গরু ও ২৫-৩০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা এবং খাসির চামড়া বাড়ানো হয়েছে ৩ টাকা। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও তারা এই দাম কোনো দিনই পান না। ট্যানারি মালিকদের ইচ্ছামতো দামেই তাদেরকে চামড়া বিক্রি করতে হয়।


ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা পাওনার কারণে পুঁজি হারিয়ে গেছে তার ব্যবসার। টাকা না পাওয়ায় ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধুকে ধুকে চলছে ব্যবসা। যা যেকোন সময় অন্যদের মতো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।


এইচএ 



দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ