
প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২২, ০৮:০১ এএম
ওয়াহিদুল ইসলাম ডিফেন্স, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বালুপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসনে বসবাসরত দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারগুলো যেভাবে সুখ দুঃখের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন।
রোববার (১০ জুলাই) সারাদেশের ন্যায় উপজেলায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা।
সরজমিনে উপজেলা খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বালুপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসনে বসবাসরত দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা এবারের ঈদুল আযহা কেমনভাবে পালন করলেন। কথা হয় ৫৫ বছর বয়সি জেলেখা বিবির সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। ১ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে পরের বাড়ীতে। ছেলে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মিপুরে অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। বউ নিয়ে সেখানেই থাকেন। তিনিও ছেলের সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু ছেলের বউ শ্বাশুড়িকে মেনে নিতে পারেন না। তাই বিভিন্ন সময় অশান্তি হতো। ছেলে ও তার বউকে নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য বিচার শালিশও হয়। কিন্তু ফল ভাল হয়নি। অবশেষে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই আবাসনে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেই থেকে ভালই আছি। খুব খারাপ নেই। জেলাখা বিবি বলেন, খেয়ে থাকি না খেয়ে থাকি কেউ বলার নেই।’
মিঞ্জুর (২০) স্বামী রিক্সা ভ্যান চালক আতিকুর। মিঞ্জু বলেন, ‘আবাসনেই এবারের ঈদ ভালই কাটছে। কারণ পূর্বে যেখানে ছিলাম অর্থাৎ দক্ষিণ কৃষ্ণপুর সেখানে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, জা-ননদের সঙ্গে প্রায়শই সামান্য বিষয়ে ঝগড়া লাগত। এখানে সেই ঝামেলার কিছু নেই। স্বামী রিক্সা ভ্যান চালিয়ে যা কামাই রোজগার করে আনেন তা দিয়ে আমাদের চলে যায়।’
বালুপাড়া আবাসনের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম (৫০) এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে। ২ ছেলে ২ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি তারা শ্বশুরবাড়ীতে। ২ ছেলের মধ্যে ১ ছেলের বাড়ীর একটু জায়গা আছে। অপর ছেলের কোন জায়গা নেই। তাদের সঙ্গে ছিলাম কিন্তু তাদের পরিবারে যেন আমি বোঝা তাই এই আশ্রায়নের বাসিন্দা এখন।’
আশ্রায়নে কিভাবে চলছে তার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন কাজ করি, অনেকে সাহায্য সহযোগীতা করে, তা দিয়ে একা মানুষের চলে যায়। তিনি আরও বলেন, আশ্রয়নে কাজের ব্যবস্থা হলে অনেকেরই ভাল হতো। অনেকেই কাজের জন্য সকালে বের হয়ে যান আবার রাতে এসে এখানে থাকেন।’
কথা হয় মঞ্জিলা, শারমিন ও মাকছুদার সঙ্গে। কেমন হচ্ছে ঈদ এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ‘এখানে তো বাহির থেকে এসে কেউ কিছু দিবেনা। তাই গ্রামে যেতে হয়। গ্রামের মানুষ কোরবানির গোস্ত দিয়েছে তা দিয়েই হচ্ছে ঈদ। তবে তারা বলেন আশ্রায়নে আসার পূর্বে তারা থাকতেন ফুলবাড়ী পৌর এলাকার পশ্চিম গৌরিপাড়ায়। সেখানে ঈদে কোথাও যেতে হতো না আশপাশ থেকে মানুষ দিয়ে যেতো। তবে সেখানে ভাড়া বাড়ীতে থাকতে হতো। বর্তমানে এখানে নিজস্ব মাথা গুজার ঠাই হয়েছে তাই চিন্তা নেই। তাদের সংসার চলে কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন রাজ মিস্ত্রির যোগাড়ির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে যায়। সমস্য হয় না। তবে তারা অভিযোগ করে বলেন আবাসন কমিটি আছে, তারা সঠিক ভাবে কাজ করে না। তারা আরও বলেন, এখনে এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বাররাও আসেন না। কালে ভদ্রে আসেন। আর প্রশাসনের লোকজন বাড়ী দিয়েছেন আর তাদের খোঁজ খবর নেই।’
এইচএ