কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবারও ধেঁয়ে আসছে উজানের ঢল। এতে করে প্লাবিত হচ্ছে নদীর তীরবর্তী নতুন গ্রাম, ডুবে যাচ্ছে বীজতলা ও ফসলের মাঠ। কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া বন্যার ধকল না কাটতেই আবারও জেলার সব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বন্যায় ঈদের আনন্দটুকুও ম্লান হতে পারে বলে জানিয়েছেন এখানকার লোকজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম ধরলা নদের শিমুল বাড়ি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদের সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেঃমিঃ, ব্রহ্মপুত্র নদের দুধকুমার পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া তিস্তাসহ অন্য নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫০টির মতো চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল এলাকা নতুন করে পানিবন্দী হতে যাচ্ছে। গত বন্যায় ৮০ হাজার কৃষকের প্রায় ১২৭ কোটি পরিমান টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হয়েছে। কৃষকের এই অপূরণীয় ক্ষতি কাটতে না কাটতেই আবারও শুরু হয়েছে বন্যার বিধ্বংসী আচরণ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এখানকার কৃষকরা।
সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ’গত বন্যায় পাট, সবজির ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন বীজতলা করেছি সেটাও পানিতে ডুবে গেল। ৪-৫ দিন যদি এই পানি থাকে তাহলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।‘
পাঁচগাছি ইউনিয়নের আরাজি কদমতলা গ্রামের মৎস্য চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ’আমার পুকুর একবার তলিয়ে প্রায় অর্ধেকের বেশি মাছ বের হয়ে গেছে। আবারও যদি বন্যা হয় তাহলে পুকুরে একটি মাছও থাকবে না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলায় এক হাজার পাঁচ’শ পুকুর তলিয়ে ২কোটি ৩৭ লাখ পরিমাণ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অধিদফতর কুড়িগ্রামের মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ১৫’শ পুকুরের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৩ মেঃটন মাছ ও ১৭ লাখ টাকার মাছের পোনা বন্যায় ভেসে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ’জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মৎস্য চাষিদের সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে আবারও বন্যার প্রকোপ দেখা দিলে কুড়িগ্রামের মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কুড়িগ্রামের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এখানকার মৎস্য চাষিরা।'
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও দুধকুমারের পানি সমতল বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে ধরলা, দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ২য় দফায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
জেইউ/এএল