মো. জুয়েল রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
নিজের করোনা পরীক্ষা নিজেই করছেন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতফেরত যাত্রীরা। আর নামমাত্র করোনা পরীক্ষা শেষে পাঠানো হচ্ছে কোয়ারেন্টিনে। খোলা আকাশের নিচে করোনা পরীক্ষার এমন অব্যবস্থাপনা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন।
ভারতফেরত যাত্রী চট্টগ্রামের কবির আহম্মেদ জানান, ক্যানসার আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন তিনি। শনিবার (৫ জুন) দুপুরে আখাউড়া বন্দরে এসে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্নের পর বলা হচ্ছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন মানতে হবে। করতে হবে করোনা পরীক্ষা। নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের এমন নির্দেশনা মানতে বাধ্য। তবে আখাউড়া স্থলবন্দরের করোনা টেস্টের বাধ্যতামূলক কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'খোলা আকাশের নিচে পুকুর পাড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। এমন কেন? বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।'
অপর এক যাত্রী বলেন, আখাউড়া স্থলবন্দরে করোনা টেস্ট যিনি করছেন তার কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নেই। তিনি একাই সবার পরীক্ষা করছেন। এ ছাড়া এক হাতে টাকা গুনছেন আবার ওই হাতে কোভিড টেস্টের কটন বাড নিচ্ছেন! আর যে কটন বাড তিনি ব্যবহার করছেন তা প্রকৃত কটন বাড কিনা এ নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় অনেক যাত্রী কটন বাড নিজেই নিজের নাকে ঢুকিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। এতে প্রকৃত অর্থে কতটুকু করোনার নমুনা সংগ্রহে সাফল্য আসবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
এ দিকে আখাউড়া স্থলবন্দরের মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট মনির হোসেন খান বলেন, ‘আমার সাধ্য অনুযায়ী আমি রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছি। রোগীরা অনেকে নমুনা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। অনেকে জোর করে নাকে কটন বাড ঢুকিয়ে নিজেরা নমুনা দিচ্ছেন। তাছাড়া রোগীদের অভিযোগ ও ক্ষোভের বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
স্থলবন্দরে হোমকোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহানা আক্তার স্বর্ণা বলেন, ভারতফেরত যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে না পারায় তারা অনেক সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
স্থলবন্দরের নাজুক পরিস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে এ আলম।
তিনি বলেন, ‘স্থলবন্দরের এ অবস্থার কথা চিন্তা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে একজন মেডিকেল টেকনোলোজিস্টের স্থলে দুইজন করা হয়েছে। সীমান্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় আইনি জটিলতার কারণে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো করা যাচ্ছে না। দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেন ব্যবহার করছেন না সেটি খতিয়ে দেখা হবে। তবে ভারতফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন মানতে হবে। সেইসঙ্গে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক।
গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ১৪ শর বেশি যাত্রী আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন। তবে তাদের মধ্যে কারও শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৭৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৫১৫ জন। মারা গেছেন ৫৯ জন।
টিআর/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন