• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে জনভোগান্তি

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২, ১০:২০ পিএম

কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে জনভোগান্তি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম জেলায় ছোট বড় মিলে ১৬টি নদ নদী রয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদনদীর পানি বেড়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে এসব নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, বাড়িঘরে চারপাশে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষত বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অববাহিকার কৃষকরা।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের নিচু এলাকা ইতিমধ্যে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অনেকের বাড়িঘরের চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে সহসাই বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বাসিন্দারা বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার চেয়ে নিজেদের আবাদ করা ধান রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।’

যাত্রাপুর হাট এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল জানান, গত কয়েকদিন ধরে দ্রুত পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর হাটের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মামুনর রশীদ জানান, তাদের এলাকাতেও নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়ন ঘুরে এসে তিনি বলেন, সেখানে নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধান ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মামুন বলেন, ‘কুটিবামনডাঙা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ কাজের সাইটে ঠিকাদারের লোকজন পানি নিষ্কাশনের পাইপ বন্ধ করায় সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’

এদিকে পাউবো জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ধরলা ও তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে এখনও জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি বলে জানায় পাউবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত এবং সীমান্তবর্তী ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় নদনদীর পানি বাড়ছে। তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পূর্বাভাস নেই।’

আগামী কয়েকদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্যান্য নদনদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

তিস্তা অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও তা মেরামতে কাজ চলছে জানিয়ে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশী বলেন, জেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নদী ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনও জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্ততি রয়েছে।

সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বন্যা মৌসুম এসে গেছে। আমরা জেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভা করেছি। সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

বন্যায় উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তা বিতরণের প্রস্তুতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের স্পিড বোর্ড রয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিও গুলোরও কিছু নৌকা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখায় পর্যাপ্ত খাদ্য ও টাকার বরাদ্দ রয়েছে।’ প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এসএ/
আর্কাইভ