প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২২, ০৩:১৯ এএম
জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
গ্রীষ্মের প্রখর রোদ্দুরে
পুষ্পভারে আচ্ছাদিত রাস্তার দুইপাশের বৃক্ষরাজি। জারুলের
গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে সর্বত্র। গ্রীষ্মের
প্রখর উত্তাপের মাঝেও চারদিকে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়াবী কুকিলের ডাক। হালকা
বাতাসে সবুজ পাতার ফাঁকে
মাথা তুলেছে জারুলের বেগুনি পাপড়ি।
এমন
দৃষ্টিনন্দন রঙের মায়াবী দৃশ্যে চোখ ভরে উঠবে যে কারোরই।
সৃষ্টিকর্তার এমন এক সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায়। বিশেষ করে মধুপুর, সখীপুর, ঘাটাইল, মির্জাপুর ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় বেশ লক্ষ করার মতো জারুল ফুল। ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, গারোবাজার, সাগরদিঘী ও জোড়দিঘী এলাকায় ঘুরলে দেখা যায় এমন অপরূপ দৃশ্যের। সবুজ প্রকৃতির মাঝে রোদে ঝলমল করছে একেকটি জারুল গাছ। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বেগুনি রঙের চমৎকার জারুল ফুল। গ্রীষ্মের শুরুতে এসব গাছে মোহময়তা নিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই ফুল। যার বেগুনি রঙের আভা পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম
ঘুরে দেখা যায়, দেওপাড়ার মলাজানী বাজারের
পূর্বপাশে রাস্তার ধারে সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত বেগুনি জারুল ফুটিয়ে তুলেছে রহস্যময় প্রকৃতি। রং
আর রূপের বাহার ছড়ানো অপরূপ বর্ণিল সাজের এই ফুল সাজিয়েছে সৌন্দর্যের ডালি।
জোড়দিঘী কলেজের পেছনে
এবং সাগরদিঘী ফরেস্ট অফিসের সঙ্গে (রাস্তার
পাশে) সুভাষিত হচ্ছে জারুলের
ঝুমকোতে।
ফুলে
ফুলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ নান্দনিকতার।
যোগ
করেছে নতুন সৌন্দর্যের মাত্রা।
জারুলকে
বলা হয় বাংলার চেরি।
গ্রীষ্মে
অপূর্ব হয়ে ফোটে এই ফুল।
চোখ
ভরে যায় তার রূপ দেখে।
জারুলের
রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবিব তাঁর
স্বদেশ কবিতায় লিখেছেন, "মনের
মধ্যে যখন খুশি এই ছবিটি আঁকি,
এক
পাশে তার জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখি।”
প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর তার গানে বলেছেন, ‘ওগো বিদেশিনী, তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও, এসো দুজনে প্রেমে হই ঋণী।” সেই গান শুনে হয়তো কোনো এক কাল্পনিক বিদেশিনীকে শিউলি ফুল দেওয়ার জন্য কতো খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি। যেমনটি পায়নি চেরি ফুলের দেখাও।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানান,
জারুলের
আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ,
ভারত
ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলগাছের দেখা মেলে।
জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক
নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওসা।
জারুলগাছ
সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের শুরুতে এর ফুল ফোটে
এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়।
ফুল
শেষে গাছে বীজ হয়।
বীজ
দেখতে গোলাকার।
জারুল
বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।
বাংলাদেশে সাধারণত নীলাভ
ও গোলাপি এই দুই রঙের জারুল ফুল দেখা যায়। জারুলগাছের বীজ,
ছাল
ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ
ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা,
কাশি
ও অজীর্ণতার চিকিৎসায়ও জারুল যথার্থ উপকারী।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের
করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাবেক অধ্যক্ষ আলীম মাহমুদ জানান, আমাদের
দেশে সব ঋতুতেই কোনো না কোনো ফুল ফোটে।
এসব
ফুলের রঙ, গন্ধ আলাদা। তবে
গ্রীষ্মের ফুলের মধ্যে জারুল অন্যতম।
এর
নজরকাড়া বেগুনি রঙ সবাইকে
বিমোহিত করে।
এএমকে