
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২২, ০২:০৫ এএম
এম এ কালাম, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক
জাদুঘর দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম আয়োজন করেছে ”শতবর্ষী
সারিন্দা প্রদর্শনী“। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে সংগ্রাহক রেজাউল করিম আসলামের
সতের শতাব্দী থেকে উনিশ শতাব্দীর সংগ্রহিত ১২টি দুর্লভ সারিন্দা। যার মধ্যে রয়েছে পাটগ্রাম, বুড়িমারি,
কুড়িগ্রাম থেকে রহমান ফকিরের (৭৫) কাছ থেকে পাওয়া ৩৬৫ বছরের পুরোনো সারিন্দা।
কালীররহাট, লালমনিরহাট, গুনধর
বাবুর কাছ থেকে পাওয়া ৩০০ বছরের পুরোনো ও লালমনিরহাট মনা সাধুর কাছ থেকে পাওয়া ২৫০ বছরের পুরানো সারিন্দা।
এ
ছাড়াও ময়মনসিংহের গৌরীপুরের নাও ভাঙার চরের মোক্তার হোসেন ফকিরের (৫১) কাছ থেকে
পওয়া চার প্রজন্মের ব্যবহৃত দুইশ বছরের পুরোনো
সারিন্দা, যেটি ব্যবহার করতেন মোক্তার ফকিরের বাবা নাম
রমজানী আলী ফকির, দাদার নাম ইয়াছিন ফকির তার বাবা জমির
ফকির। হালুয়াঘাট থেকে প্রাপ্ত কীর্তিনিয়া মনীন্দ্র ওস্তাদজির ব্যবহৃত ১৫০ বছরে পুরোনো সারিন্দা।
রেজাউল করিম আসলাম একজন মুলত বাদ্যযন্ত্র ও লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক। তার সংগ্রহে রয়েছে লুপ্তপ্রায়, বিলুপ্ত ও চলমান ৬০০ বাদ্যযন্ত্র। তিন পুরুষ ধরেই এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবসার সঙ্গে বংশ পরম্পরায় জড়িত আসলামের পরিবার।
ময়মনসিংহ শহরের বড় বাজারে রয়েছে ‘নবাব এন্ড কোং’ নামে আসলামের একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান। ১৯৪৪ সালে দাদা নবাব আলী বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা শুরু করেন। আসলামের দাদার পর তার বাবা জালাল উদ্দিন ব্যবসার হাল ধরেন। ছোটবেলা থেকেই লোকজ বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় রেজাউল করিম আসলামের। পরে ২০০৬ সাল থেকে শুরু করেন বিরল বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ। সংগ্রহের পাশাপাশি রেজাউল করিম আসলাম এসব নিয়ে গবেষণাও করছেন। হারিয়ে যাচ্ছে যে যন্ত্রগুলো, কারিগরদের দিয়ে ওই যন্ত্রের আদলে নতুন করে আবার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার কাজও করছেন তিনি।
প্রর্দশনী
নিয়ে আসলাম বলে, ‘তৈরিকারক,
বাদক, উপকরণ
সবই হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় সারিন্দা ছিল খুবই মুল্যবান। যারা
বাজাতো তারাও ছিলেন মরমি লোক।
এগুলো হারানোর বা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই উদ্যোগ। এই সারিন্দা
কারো রান্নাঘর, কারো গোয়ালঘর, কারো
উগার বা সিলিং থেকে পাওয়া গেছে। যাদের কাছে থেকে পাওয়া গেছে তারা জানে না এর
ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যগত মূল্য কতো। অনেক সারিন্দা চুলার
লাকড়ী বা মাটিতে মিশে ফসিল হয়ে গেছে। এই প্রদর্শনী থেকে যদি কেউ জানতে পারে তাহলে
আমাদের পুরাতন সারিন্দাগুলো বিলুপ্ত হবে না, আর নতুন
প্রজন্মের কাছে এই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি
হবে।’
প্রদর্শনী
সম্পর্কে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার উপ-কীপার
মুকুল দত্ত বলেন, ‘এই ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিৎ। তাহলে
বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছলে
আমাদের লোকজ সম্পদ ও লোকজ ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।’
সারিন্দা
নিয়ে প্রবাদ রয়েছে–”আমি কই কি, আমার সারিন্দা
বাজায় কি।” প্রবাদটির অর্থ হলো–কথায় ও সঙ্গতে মিল নেই। অর্থাৎ আমরা যা বলি তার সঙ্গে কাজের মিল নেই। প্রবাদটি সবার কাছে পরিচিত
হলেও যে বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে এটি রচিত সেই সারিন্দা যন্ত্রটি সবার কাছে অপরিচিত। কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এর প্রধান
কারণ প্রথমতো তৈরিকারকের অভাব, দ্বিতীয়ত
বাদকের অভাব।
বাংলাদেশের
বিভিন্ন অন্ঞ্চলে যেসব সারিন্দা পাওয়া যায় তা সাধারণত
ছুতার বা কাঠ মিস্তিরির দ্বারা বাদকের নির্দেশানুযায়ী তৈরি। কেউ কেউ আবার নিজের সারিন্দা নিজেই বানিয়ে নিতেন কুড়াল, খুন্তা, বাইশা, বাটাল
দিয়ে। সেক্ষেত্রে মনপবন, নিম, চন্দন,
লোহা, শাল, বৈলাম
ও মেহগিনি কাঠ ব্যবহার করা হতো।
১৮
মে থেকে ২০ মে, তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের সঙ্গে রয়েছে পুঁথি পাঠ, বাউল বৈঠক, শিশুদের সংগীত ও যন্ত্রসংগীত। আয়োজনটির সঙ্গে
কাজ করছে তার দুই মেয়ে সমন্বয়করী হিসেবে জয়িতা অর্পা ও শৈল্পিক নির্দেশনায় জাওয়াতা
আফনান।
আন্তর্জাতিক
জাদুঘর দিবসের এই আয়োজনের সহোযোগিতায় রয়েছে নোভিস ফাউন্ডেশন ও ময়মনসিংহ বাউল
সমিতি।
ঈদগাহ
মাঠের বিপরীতে কাঁচিঝুলি রোডস্থ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ গীর্জার নিচ তলায় “এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম” গ্যালারি হলে
প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উম্মুক্ত।
এএমকে