পঞ্চগড় প্রতিনিধি
‘আমার বাবা বাড়ির আঙিনায় ফুলের বাগান লাগিয়েছে। আল্লাহ তুমি আমার বাবার কবরটাকে ফুলের বাগান করে দিও।’ এভাবে বিলাপ করছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের বাবা আব্বাস আলী। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে মা লুৎফা বেগমের। ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তার দুই বন্ধু মাহবুবার রহমান ও সিয়াম ইসলাম। তাদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম ও কান্নার রোল। বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি-খালপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। তিন কিশোরের করুণ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় সবসময় একসঙ্গে ঘুরতো এই তিন কিশোর। একই বংশের এবং বয়স কাছাকাছি হওয়ায় তারা তিনজন ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এবার ঈদের দিনে একই সঙ্গে ঈদের নামাজও পড়েছিল তারা। ঈদের নামাজ শেষে একই সঙ্গে ছবি (সেলফি) তুলে ফেসবুকেও দিয়েছিল তারা। ঈদের পরদিন মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মারাও গেল তিনজন একই সঙ্গে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় স্থানীয় খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তিন কিশোরের একই সঙ্গে জানাজা শেষে খালপাড়া কবরস্থানে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। তিনজনের জানাজায় সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকাল চারটায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পুকুরীরডাঙ্গা-বালুরঘাট এলাকায় তালমা-মডেলহাট সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায় এই তিন কিশোর। ঈদ উপলক্ষে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিল ওই তিন কিশোর। পথে তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মোটরসাইকেলসহ তারা সড়কের পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। রাতে নিহত কিশোরদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তিনটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ।
নিহত তিন কিশোর হলো হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি-খালপাড়া এলাকার তারেক বিল্লাহর ছেলে মাহবুবার রহমান ওরফে শিশির (১৭), আব্বাস আলীর ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (১৬) ও পয়গাম আলীর ছেলে সিয়াম ইসলাম ওরফে নতুন (১৬)। তাদের মধ্যে মাহবুবার স্থানীয় হাফিজাবাদ দ্বারিকামারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে এবং আবু বক্কর একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছিল। সম্প্রতি সে পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। আর সিয়াম ইসলাম ওরফে নতুন হাফিজাবাদ দ্বারিকামারি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঢাকায় তার বড় ভাইয়ের একটি মেকানিক দোকানে কাজ করতো। ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিল সে।
নিহত সিয়ামের বড় ভাই সবুজ ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকালে বাড়ি থেকে ওরা তিনজন মহারাজার দিঘি দেখতে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর খবর পাই, তারা তিনজনই দুর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ভাই আর নাই। ঈদের আগের দিন শুধু আমার ভাইটা বাড়িতে এসেছিল। আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটাই চলে গেল। ও আমাদের পরিবারের সবার আদরের ছিল।’
এসএ/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন