কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অধিগ্রহণ করা নিজ অফিসের জমি আগের মালিককে ফেরত দেওয়া কাণ্ডে ছিল তার সংশ্লিষ্টতা। তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে অধিগ্রহণের জমি ফেরতকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল পুরোপুরি বেআইনি ও ক্ষমতাবহির্ভূত। এ নিয়ে এখনও মামলা চলমান। যার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তিনি হলেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সম্প্রতি বদলিকৃত প্রোগ্রাম অফিসার মর্জিনা খাতুন। এই নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে ২০১৫ সালে রজু হয়েছিল বিভাগীয় মামলা।
এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রমাণ পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদনে অসদাচরণের জন্য শাস্তির সুপারিশও করেছিল। ২০১৬ সালে কর্তৃপক্ষ শাস্তিস্বরূপ সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুসারে তাকে তিরস্কার, একই সঙ্গে বকেয়া বেতন ভাতাদি বন্ধ ও চার বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতও করেছিল।
সম্প্রতি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে সেই নারী কর্মকর্তা মর্জিনা ও সেই জমি। ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল জমির দখল পেতে মরিয়া। বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন। এতে উদ্বিগ্ন মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কুষ্টিয়া কার্যালয়।
২০২১ সালের ২ মে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূরে সফুরা ফেরদৌস মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার স্বাক্ষরিত চিঠিও প্রদান করেছেন।
চৌড়হাস মৌজায় মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ভবন নির্মাণের জন্য চৌড়হাস মৌজায় ১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তবে কখনই সেই জমি মহিলা বিষয়ক অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভূমি মালিক নামজারি করে ফেরত পাওয়ার জন্য কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে ৩৭৪/০৬ নং মামলা দায়ের করেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ আইনের (১৯৪৮ সালের ১৩ নং আইন) ১৪ এ ধারায় বিধান অনুযায়ী অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কোনো মামলা চলে না। কিন্তু অত্যন্ত সুকৌশলে ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে ও অবৈধ যোগসাজশে এডিআর-এর মাধ্যমে ১ একর জমির মধ্যে মাত্র ১ বিঘা জমি দফতরের অনুকূলে রেখে ২ বিঘা জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আগের ভূমি মালিক ইমানুর রহমানকে ফেরত প্রদানের ঘটনা ঘটে। পরে এই রায় ডিক্রি বাতিলের জন্য কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পক্ষ থেকে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে ২৮/১৮ নং মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
পরে ৩৭৪/০৬ নং মামলার বাদী অধিদফতর এডিআরের মাধ্যমে হাসিলকৃত রায় ডিক্রি বলবৎ রাখার জন্য কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দেন। পুনরায় কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতে ৪৭/২০১৮ নং রিভিশন দায়ের করলে জেলা জজ সম্পূর্ণ বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত দেন যে যুগ্ম জেলা জজ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ আইনসঙ্গত হওয়ায় তা হস্তক্ষেপ যোগ্য নয়।
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি এসেছে সিটি নিউজ ঢাকার হাতে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সকল অবৈধ যোগসাজশ ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের সম্প্রতি বদলিকৃত প্রোগ্রাম অফিসার মর্জিনা খাতুন। যিনি ক্ষমতা প্রাপ্ত না হয়েও ৩৭৪/০৬ নং মামলায় এডিআর স্বাক্ষর করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চিঠির শেষ দিকে উল্লেখ আছে, মামলা বিচারাধীন থাকলেও ঐ জমির ডিক্রি পেতে উঠে পড়ে লেগেছে স্বার্থান্বেষী মহল। সে কারণে পুরো এক একর জমি ফেরত পেতে ও ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।
এদিকে এমন কাণ্ডে জড়িত থেকেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই নারী কর্মকর্তা। তিনি জেলার দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ব্যাপারে আগের ভূমি মালিক ইমানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরে সম্প্রতি বদলিকৃত প্রোগ্রাম অফিসার মর্জিনা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি। ঘণ্টাখানেক পর কল দিবেন।’ পরবর্তীতে ফোন দিলে তিনি আর ধরেননি।
কুষ্টিয়া মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক নূরে সফুরা ফেরদৌস বলেন, ‘জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছে অধিদফতর। জমি বুঝে না পাওয়ায় এখন ভাড়া অফিসে কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জমিটি নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকলেও ওই জমি দখল করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এখনও তৎপর।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শুনেছি জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএ/ডা
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন