• ঢাকা শনিবার
    ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

গরিবের ডাক্তার হতে চায় সাগর

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২২, ০৪:৪৪ এএম

গরিবের ডাক্তার হতে চায় সাগর

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

শত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে আলোর দিশা হয়ে সবার মাঝে আলো ছড়ায় হাতেগোনা কিছু মানুষ। কষ্টের মাঝেও লুকিয়ে থাকে তাদের সফলতার গল্প। শত কষ্টেও থেমে থাকে না তাদের পড়াশোনা। এমনই একজন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাগর মিয়া (১৯) তিনি আদাজান পশ্চিম পাড়া গ্রামের হতদরিদ্র সিএনজি চালক আব্দুল আউয়াল মিয়া গৃহিনী হেনা আক্তারের ছেলে।

এবার মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ১৫৮৯তম হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সাগর মিয়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৭. নম্বর পেয়েছে তিনি।

সাগর মিয়া বলেন, ‘আমার পরিবার হতদরিদ্র। পড়াশোনার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পরিবারকে। আমার পরিবারের দূরবস্থা দেখে স্কুলের শিক্ষকেরা আমার বেতন কম  নিতেন। মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার বাবা সিএনজি চালিয়ে আমার পড়াশোনার জোগান দিয়েছেন। সঙ্গে আমার মা রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন। গরুর ঘাস কেটেছেন, গরু পালন করেছেন। সেই গরুর দুধ বিক্রি করে, হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে আমার পড়াশোনার খরচ চালাতেন। নবম দশম শ্রেনিতে পড়ার সময় আমার মা একটা নতুন কাপড়ও কিনতে পারেনি আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য। মা বাবা আমার জন্য যে পরিশ্রম করেছে সে কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। গরিবের যে কত কষ্ট তা আমি বুঝি, এজন্যই আমি পড়াশোনা করে গরিবের ডাক্তার হতে চাই।’

ব্যাপারে সাগরের বাবা আব্দুল আউয়াল মিয়া মা হেনা আক্তার জানান, তাদের চার সন্তানের মধ্যে সাগর মিয়া সবার বড়। ভাঙা টিনের ঘরছাড়া আর কিছু নেই। ঘরেই পরিবারের সবাই থাকি। আমরা দিন আনি দিন খাই। সাগর আর তিন মেয়ের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। সিএনজি চালিয়ে গরু পালন করে আমাদের সংসার চলতে হয়। এর মাঝেও কষ্ট করে না খেয়ে সন্তানের পড়ার খরচ চালিয়েছি। কোনো সময় ভালো একটা পোশাক কিনে দিতে পারিনি। যা দিয়েছি তাতেই সে সন্তুষ্ট থেকেছে। যেনো পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, সেই দোয়া করি।

প্রতিবেশী শিপন মিয়া বলেন, ‘তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষা জীবনে সে আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। মেধার জোরেই সে তার সব বাধা জয় করে মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।’

প্রতিবেশী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিল সাগর। সে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ , বাসাইল গোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এ ছাড়াও এসএসসিতে জিপিএ নলুয়া বিএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। মেডিক্যালে ভর্তি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে খরচ তা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা খুবই কষ্টকর। কেউ যদি  তাকে সহায়তা করে তাহলে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী গর্বিত।

এএমকে

আর্কাইভ