• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত,অবৈধ নির্বাচন হতে দেবোনা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২২, ০৬:০২ এএম

শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত,অবৈধ নির্বাচন হতে দেবোনা

গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন আগামী ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে নির্বাচন শনিবার । নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ একাংশের প্রার্থীরা। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে নির্বাচন পরিচালনা করলে হতেপারে বড় ধরণের সংঘর্ষ।

জানা যায় বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাত দুষ্টতা এবং অনেক প্রকৃত শ্রমিককে বাইরে রেখে অশ্রমিকদের ভোটার করার অভিযোগে জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্ট।  ২ এপ্রিল এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।

জানা গেছে, বাস মিনিবাস কোচ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (রেজিঃ নং- খুলনা ৫৫০) এর ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের জন্য এ্যাড. সাইদুজ্জামানকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সাধারণ সভায় নিয়োগ করা হয়। সে অনুযায়ী ২ এপ্রিল এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। তবে অভিযোগ ওঠে, ভোটার তালিকায় বহু সংখ্যক অশ্রমিককে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে এই ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম ছিল পক্ষপাতদুষ্ট।

এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হলে বাস মিনিবাস কোচ শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক শেখ রবিউল ইসলাম খুলনা শ্রম আদালতে একটি মামলা করেন(মামলা নং- ১৬২২)। মামলাটি শুনানী শেষে গত ২৯ মার্চ খারিজ করে দেওয়া হয়। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে শেখ রবিউল ইসলাম হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করে। বৃহস্পতিবার শুনানী শেষে বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম এর বেঞ্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করেন। আগামী ৩ মাসের জন্য এই নির্বাচন স্থগিত থাকবে বলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে বলা হয়।

এদিকে শুক্রবার একংশের প্রার্থীরা নির্বাচনের লক্ষে প্রস্তুতি নিলেও অধিকাংশ প্রার্থী এবং ভোটাররা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে হাইকোর্টের আদেশ মেনে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় বাস টার্মিনাল থেকে একটি মিছিল বের হয়ে খুলনা রোড মোড়ে গিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন শ্রমিকরা। এতে অংশ গ্রহন করেন জেলা শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ, মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সদস্যরা।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের অবৈধ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দিলেও কিভাবে নির্বাচন হয়। হাইকোর্টের থেকে নির্বাচন কমিশন কি বেশি শক্তিশালি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সাধারণ সভায় আমাদের দাবি শ্রমিকদের চাঁদার টাকা মউকুফ করে তাদের কার্ড দেওয়ার কথা মেনে নিলেও পরে আমাদের দাবি মানেনি। ফলে আমরা আদালতে মামলা করেছি। তবে তারা যদি আদালতের আদেশ অমান্য করে নির্বাচন পরিচালনা করে তাহলে সেটি শ্রমিকদের লাশের উপর দিয়ে গিয়ে করতে হবে। আমরা আমাদের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত অবৈধ নির্বাচন হতে দেবনা।

বক্তারা বলেন সাধারণ সভায় আমরা যাচাই বাছাই করে অশ্রমিকদের কার্ড বাতিল ও সংশোধন করতে হবে। ইউনিয়নের আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রদান করে পুনরায় সাধারণ সভা আহ্বান করতে হবে। দুই তৃতীয়াংশ শ্রমিকের মতামতের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া মৃত্যু বরণ কারী শ্রমিকের পরিবারকে ত্রিশ হাজার টাকা প্রদান, শ্রমিকদের ফ্রি রিনু করা দাবী জানাই। তবে শ্রমিকদের উন্নয়নের পক্ষের এসব দাবিতে তারা কর্নপাত করেনি। যে কারনেই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই।

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ সরদার, সদস্য সচিব মাহমুদুল আলম বিবিসি, জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শেখ রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আখতারুজ্জামান মহব্বত, নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা সভাপতি প্রার্থী নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাকির হোসেন টিটু, সাবেক সহ সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মুজিবর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শফিউল ইসলাম শফি, সাবেক দপ্তর সম্পাদক, কামরুল ইসলাম কবির, সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ জুলফিকার হোসেন সবুজ ও সদস্য মহিদ প্রমুখ।

তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাজ প্রথম থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। এর আগে (২০) ফেব্রুয়ারী প্রতিক বরাদ্দের দিন থাকলেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যলয় (শ্রমিক ইউনিয়ন) এর অফিসে উপস্থিত হয়নি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এমনকি সেদিন দেওয়া হয়নি প্রতিক বরাদ্দ।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড. শেখ সাইদুর রহমান বলেন আমারা শুনেছি নির্বাচন স্থগিত থাকবে বলে হাইকোর্টের একটি আদেশে বলা হয়েছে। তবে হাইকোর্ট থেকে কোন নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। এছাড়া সদর সহকারী জর্জ আদালত আমাদের সাত কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানর নির্দেশ দিয়েছে। তবে নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেয়নি।

সাজেদ/
আর্কাইভ