আসমাউল আসিফ, জামালপুর প্রতিনিধি
যার চুল বিমোহিত করত সবাইকে। যার হাসিতে হেসে উঠত পুরো গ্রাম। যার সৌন্দর্যের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। জামালপুরের বিখ্যাত সেই তরুণী ছিলেন খায়রুন সুন্দরী।
খায়রুন সুন্দরীকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গান, গল্প, নাটক। অভাবনীয় জনপ্রিয়তার কারণে জেলাজুড়ে তার কাহিনি নিয়ে জারিগান, পালাগান ও নাটকের বেশ প্রচলন ছিল। এমনকি তার জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাও।
আলোচিত এই রমণীর গল্প নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে খায়রুন ও তার স্বামীর শেষ পরিণতি একইভাবে উপস্থাপিত হলেও বাস্তবে বিষয়টি এমন ছিল না। বিশেষ করে তার মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত যে গল্প রয়েছে তাও সঠিক নয়। অবশেষে মৃত্যুর ৫৩ বছর পর জানা গেছে তার মৃত্যুর আসল কারণ।
সম্প্রতি জানা গেছে খায়রুন সুন্দরী ও তার স্বামীর মৃত্যুর আসল কারণ। ওই দম্পতির বড় সন্তান তুলে ধরেছেন তাদের মৃত্যুর ঘটনা।
খায়রুন সুন্দরীর বিয়ে ও মৃত্যু
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বড়খাল গ্রামের আইজউদ্দিনের বড় ছেলে ফজলুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর গ্রামের আজগর আলীর মেয়ে খায়রুন বেগমের। এই দম্পতির ঘরে জন্ম হয় পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের। তবে মেয়েটি শৈশবেই মারা যায়।
খায়রুন দেখতে যেমন সুন্দরী ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদার মনের মানুষও। খায়রুন ও তার স্বামীর দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। তবে ১৯৬৮ সালের ৩০ জুন দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর সঙ্গে হাতাহাতির একপর্যায়ে মারা যান খায়রুন বেগম।
যা বলছেন তার সন্তান
খায়রুনের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম (৭২) জানান, খায়রুন সুন্দরীকে তার স্বামী ফজলুল হক পারিবারিক কলহের জেরে গলায় কলসি বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন বলে যে ধারণা রয়েছে, বাস্তবতা কিন্তু তা নয়। স্বামীর সঙ্গে হাতাহাতির একপর্যায়ে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হয় খায়রুনের।
অ্যাডভোকেট খায়রুল বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার পূর্বপুরুষদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও তাদের প্রতি জনমনে ঘৃণার জন্ম দিতেই আমার মায়ের মৃত্যুর ঘটনাটি অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়।’
‘আমরা পাকিস্তানের শাসনামল থেকেই রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ। দাদা মরহুম আইজউদ্দিন ছিলেন মুসলিম লীগ-বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের’, বলেন অ্যাডভোকেট খায়রুল।
নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন ফজলুল হক
১৯৭৩ সালে জামালপুর আদালতে খায়রুনের মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন তার বাবা আজগর আলী মাস্টার। মামলায় স্বামী ফজলুল হক নির্দোষ প্রমাণিত হন। খায়রুনের মৃত্যুর পর আবারও বিয়ে করেন ফজুলল হক। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সখিনা হক (৭৫) চার ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। ২০০২ সালে হজের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাওয়ার পর সেখানেই মারা যান ফজলুল হক।
ফজলুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী সখিনা হক (৭৫) জানান, তার স্বামী হজে যাওয়ার সময় নসিহত করে গিয়েছিলেন- হজে যাওয়ার পর যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে যেন তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। সেজন্য মৃত্যুর পর তার লাশ আর বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়নি।
ডব্লিউএস/এম. জামান/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন