• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বেহেশতে যেতে ৫৮ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে হামিদা

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২২, ০৭:৩৫ এএম

বেহেশতে যেতে ৫৮ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে হামিদা

গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বিয়ে না করলে বেহেশতে যেতে পারবেন না। এমন কথা শুনে বিয়ে করতে রাজি হন ধর্মভীরু হামিদা বেগম। অভাবের সংসারে জন্ম হয়েছিল তার। বয়স এখন ৫৮ বছর। বাবা-মাকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেলে একা হয়ে যান হামিদা। তবে নিজে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না।

অবেশেষে হামিদা বেগম বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। গ্রামবাসীর আয়োজনে ৬৮ বছর বয়সী মোকছেদ আলী গাজীর সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

হামিদা বেগম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের বাথুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত শহর আলী গাজীর মেয়ে। দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে চলতেন তিনি। বর মোকছেদ আলী গাজী একই উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের মৃত ছবেদ আলী গাজীর ছেলে। তিনি নিজের জমিজমা দেখাশোনা করেন। 

তারালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হক ছোট বলেন, ‘হামিদা আপার বয়স ভোটার আইডি কার্ডে ৫০ হলেও বাস্তবে ৫৭-৫৮ বছর হবে। তিনি খুব গরিব, তবে ধর্মভীরু ও চরিত্রবান। এলাকার মানুষ কেউ কোনোদিন তার নামে কোনো বদনাম দিতে পারেনি। কেউ কখনও কোনো অভিযোগও দেয়নি তার বিরুদ্ধে। তবে আপা বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। আসলে কী কারণে তিনি বিয়ে করতে চাইতেন না, সেটি কেউ কখনও জানতেও পারেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি হামিদা আপাকে কে যেন বলেছেন বিয়ে না করলে বেহেশতে যেতে পারবেন না। তখন আপা বিয়ে করতে রাজি হন। এই খবর মুহূর্তের মধ্যেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী সবাই মিলে পাত্র খুঁজতে শুরু করে। দেখাশোনার একপর্যায়ে মোকছেদ আলী গাজী মিলে যায়। পাত্র-পাত্রী দুজন দুজনকে পছন্দ করলে বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে গ্রামবাসীর আয়োজনে বিয়ে দেওয়া হয় তাদের।’ 

ইনামুল হক ছোট বলেন, ‘বিয়েতে গ্রামবাসী সবাই টাকা খরচ করেছেন। গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত হয় বিয়ের আয়োজনে। খাওয়া-দাওয়া হয়। আমিও ছিলাম বিয়ের আয়োজকদের একজন। বরযাত্রী এসেছিল ২০ জন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে নতুন বর-কনেকে বিদায় দিয়ে গ্রামবাসী বাড়িতে ফিরে যায়।’


জানা গেছে, হামিদা বেগমের এটি প্রথম বিয়ে। অন্যদিকে পাত্র মোকছেদ আলী গাজীর দ্বিতীয় বিয়ে। মোকছেদ আলী গাজীর প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগে। প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে রয়েছে। তারা বিবাহিত, নিজেদের আলাদা সংসার। আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন মোকছেদ আলী গাজী। জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নতুন বউকে নিয়ে ঘরে ফেরেন তিনি।
 
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, ঘটনাটি শুনেছি। ওই নারী বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। এখন শেষ বয়সে তারা সুখে শান্তিতে থাকলেই সবাই খুশি। 


সাজেদ/এফএ

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ