
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২২, ১১:৪৮ পিএম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রকেট হামলার শিকার বাংলাদেশি জাহাজ
এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় অলভিয়া বন্দরে ফেলে রাখা হয়েছে। তাতে
২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা ১৯৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।
এমন দাবি করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন
(বিএমএমওএ)। সংগঠনটির দাবি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটির বর্তমান মার্কেট ভেল্যু অন্তত
২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ গচ্চা যাবে বিএসসির ভুলের কারণেই।
৪ মার্চ শুক্রবার বিকালে এসব কথা বলেন বিএমএমওএর সাধারণ
সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘জাহাজ পরিচালনায় বিএসসির ভুল
বা গাফিলতি হয়েছে। যুদ্ধকবলিত ও জলদস্যুপ্রবণ এলাকায় জাহাজ গমনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা
জারির বিধান থাকলেও বিএসসি তা করেনি। বরং
জাহাজটিকে যুদ্ধকবলিত এলাকায় গমনের অনুমতি কেন দেয়া হলো সেটাই এখন প্রশ্নের কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। তাই জাহাজ পরিচালনায় বিএসসির সার্বিক অব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য
উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় বিএমএমওএ।’
মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে আমাদের দুজন
প্রতিনিধি রাখতে হবে। নাবিকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সেই
সঙ্গে নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান আরিফকে রাষ্ট্রীয় বীর ঘোষণার দাবি
জানান তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের
(বিএসসি) উপ-মহাব্যবস্থাক ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর আগেই জাহাজটি
অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছে। সেখানে যে যুদ্ধ লেগে যাবে তা তো কারও জানার কথা নয়। সেটা বুঝতে
পারলে ক্যাপ্টেন নিজেও যেতেন না। তাই সেখানে জাহাজ যাওয়ায় কোনো ভুল বা গাফিলতি ছিল
না।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে (ইউক্রেনে) শুধু এমভি বাংলার সমৃদ্ধি
নয়, অন্তত আরও ২০টি বিদেশি জাহাজ রয়েছে। সেগুলো রকেট হামলার শিকার হয়নি। এমভি বাংলার
সৃমদ্ধিকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়েছে- সে ব্যাপারেও আমরা নিশ্চিত নই। এই রকেট
হামলা রাশিয়া, নাকি ইউক্রেনের পক্ষ থেকে হয়েছে তাও নিশ্চিত নই। সুতরাং তদন্ত না করা
পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’
জাহাজের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসসি উপ-মহাব্যবস্থাক
ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সেটা জিও-টু-জিওর ব্যাপার। তদন্ত করে যদি দোষীর
বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় তাহলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি জিও-টু-জিও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আর পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত করাও তো সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘গত ২ মার্চ বুধবার সে দেশের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে রকেট হামলার পর জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। এতে জাহাজটির ব্রিজ একেবারে ধ্বংস
হয়ে গেছে। নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হয়েছেন। জাহাজটির ইঞ্জিন থেকে অন্য সবকিছু
ঠিক থাকলেও ব্রিজ ধ্বংসের পর সেটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলে জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায়
সেখানে ফেলে আসা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
তবে এরই মধ্যে জাহাজে অক্ষত ২৮ নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে
নেয়া হয়েছে। ৪ মার্চ বিকারে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নাবিকরা বাঙ্কার ছেড়ে বাসে চড়ে নিরাপদে
যাচ্ছেন। তবে তাদের গন্তব্য কোথায় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেননি ক্যাপ্টেন
মো. মুজিবুর রহমান।
বিএসসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ বলতে জাহাজটির
সাধারণ বীমা করপোরেশনে ইন্স্যুরেন্স করা আছে। সেখান থেকেই ক্ষতিপূরণ আসবে। নাবিক
হাদিসুরেরও সাধারণ বীমায় ইন্স্যুরেন্স করা আছে। তিনিও সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
এ ছাড়া বেসিক পাবেন হাদিসুর।
বিএসসি সূত্র জানায়, প্রায় ৩ হাজার ৯০০ টন পণ্য পরিবহনে
সক্ষম এমভি বাংলার সমৃদ্ধি চায়না থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়। ২০১৮
সালের ১০ অক্টোবর জাহাজটি সার্ভিসে আসে। এরপর থেকে মাসিক প্রায় ৩ লাখ ডলার আয় হতো এই
জাহাজ থেকে। গত ৭-৮ মাস আগে থেকে আয় বেড়ে ৬ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।
১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩২ মিটার প্রস্থ বাংলার সমৃদ্ধি
জাহাজটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে। পরে সিরামিকের কাঁচামাল
ক্লে নিয়ে ইতালির র্যাভেনা বন্দরে যাবার কথা ছিল জাহাজটি। পরদিনই রাশিয়ার হামলা শুরু
হয় ইউক্রেনে। তখন থেকেই জাহাজটি আটকা পড়ে সেখানে। জাহাজে ২ নারীসহ বাংলাদেশের ২৯ জন
নাবিক ছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, হামলার পর জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে
নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর
কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ
ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পড়ে ছিলেন নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফের নিথর দেহ।
কেজেড/ডা