প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২২, ১২:৩৮ এএম
হাতি
ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে শেরপুরের গারো পাহাড়ে তৈরি
হচ্ছে বন্য হাতির জন্য
‘অভয়ারণ্য’। ইতোমধ্যে জমি
নির্ধারণ ও মালিকানা চিহ্নিত
করার কাজ শুরু করছে
বন বিভাগ। পাশাপাশি জবর দখলে থাকা
বনভূমিও উদ্ধারে কাজ করছে।
জানা
যায়, জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার
বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত গারো পাহাড়। এক
সময় এই বনাঞ্চলে অবাধে
ঘুরে বেড়াতো বন্য হাতির দল।
কিন্তু পাহাড়ে মানুষের দিন দিন বসতি
বাড়ায় বন্ধ হয়ে যায়
হাতির চলাচল। কিন্তু মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নামে হাতির দল,
তখনই শুরু হয় হাতি
মানুষের দ্বন্দ্ব।
এতে
গত তিন মাসের ব্যবধানে ওই এলাকায় চারটি বন্য হাতির মৃত্যু
হয়। এ নিয়ে গত ১৫ বছরে
নানা কারণে প্রায় ৩০/৩৫টি হাতির
মৃত্যু হয়। বিপরীতে হাতির
আক্রমণে জেলায় প্রায় ৯০ জন মানুষ
মারা যায়। আর আহত
হন শতাধিক মানুষ। শ্রীবরদীর মালাকোচা এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে একটি হাতি
হত্যায় এবারই প্রথমবারের মতো মামলা হয়।
এই মামলায় চারজনইকারাগারে যান।
অবশেষে
হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে তৈরি হচ্ছে এই
‘অভয়ারণ্য’। স্থানীয়দের আশা,
হাতির জন্য অভয়ারণ্য হলে
কৃষকদের ফসলের কোনো ক্ষতি হবে
না, পাশাপাশি বাড়িঘরে হামলা করবে না হাতির
দল।
বালিজুড়ি
এলাকার কৃষক রমজান আলী
বলেন, ‘বাপু হাত্তি (হাতি)
যদি আমগর (আমাদের) হইতি (এদিকে) না আহে (আসে),
তাইলেতো ভালাই হব, আঙগর (আমাদের)
কোনো ক্ষতি হব না। সরহার
(সরকার) যে সিস্টেম (উদ্যোগ)
হাতে নিছে খুব বালা
(ভালো) হব।’
একই
এলাকার আরেক কৃষক রহমত
আলী বলেন, ‘হুনতাছি (শুনতেছি) হাত্তির (হাতি) জন্য রাস্তা করব,
যদি রাস্তা করে তাহলেতো বালাই
(ভালো) হব, আমরা শান্তিতে
এল্লা (একটু) ঘুমাবার পামু, আমাদের ঘরে আর হাত্তি
(হাতি) আইবো না।’
ঝিনাইগাতীর
ছোট গজনী এলাকার বাসিন্দা
আছমত আলী, সরুফা বেগম
ও লাল চাঁন জানান,
এ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই হাতির দল আসে, এজন্য
বেশিরভাগ সময় এ এলাকার
মানুষ রাত পর্যন্ত জেগে
থাকে। যদি অভয়ারণ্য হয়
খুব ভালো হবে।
একই
এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘ভাই
খুব একটা ভালো খবর
দিলেন, আমরা খুব খুশি।
কারণ আমাদের এ এলাকা গজনীর
পাশাপাশি, এজন্য প্রায় প্রতিদিনই হাতির দল আসে এবং
হানা দেয় বাড়িঘরে। পরে
আমরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে
হাতির দলকে তাড়া দেই।’
নালিতাবাড়ীর
পানিতাহা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া
বলেন, ‘মেলা দিন (অনেক
দিন) ধইরি হুনতাছি (শুনতেছি)
হাত্তির (হাতি) জন্য আস্তা (অভয়ারণ্যে)
হব, কই হয় না
তো, এল্লে (এগুলো) হুদাই। যদি আস্তা (অভয়ারণ্যে)
হয় তাহলেতো বালাই (ভালো) অইবো (হবে)।’
প্রকৃতি
ও পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয়
কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন
বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে
গারো পাহাড়ে অভয়ারণ্য করার জন্য দাবি
করে আসছিলাম, অবশেষে এটি করার ঘোষণা
এসেছে, এতে আমরা খুব
খুশি। আশা করি, দ্রুত
সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে।’
শ্রীবরদীর
বালিজুড়ি রেঞ্জ ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার মো. রবিউল ইসলাম
বলেন, ‘বালিজুড়ি, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী পর্যন্ত
হাতির জন্য অভয়ারণ্য হবে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা জমি নির্ধারণ
ও মালিকানা চিহ্নিত করার কাজ করছি।
পাশাপাশি অবৈধভাবে জবর দখল করে
থাকা জমিগুলোও উদ্ধার শুরু করেছি। আশা
করি, গারো পাহাড়ের যে
একটা ঐতিহ্য তা খুব দ্রুত
সময়ের মধ্যে ফিরে আসবে।’
জেলা
প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ
বলেন, ‘অভয়ারণ্যের প্রস্তাবটি পাস হয়ে বন
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বন বিভাগে রয়েছে।
ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
আশা করছি, হাতি-মানুষের যে
একটা দীর্ঘদিনের সংঘাত তা শেষ হবে।’
এএমকে