
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২, ১২:০৬ এএম
শাকিল মাহমুদ, বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরঘেঁষে গড়েওঠা রসুলপুর
কলোনির বাসিন্দা ১৬ বছরের মোসাম্মৎ সাদিয়া। পড়াশোনা করছে সোমের্তবান মহিলা (আলিয়া)
দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণিতে। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তাই বাড়ির সামনেই
নিজ হাতে তৈরি করেছে শহীদ মিনার।
এই শহীদ মিনারজুড়ে রঙিন কালি দিয়ে সাদিয়া লিখেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। এঁকেছে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুলসহ হাতের ছাপ। বেদীতে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। স্থানটি মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে রঙ-বেরঙয়ের কাগজে। এলাকার শিশুদের নিয়ে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনও করেছে।
জানতে চাইলে সাদিয়া হাসিমুখে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা, ৪ বছর হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা
দিবসে শহীদ মিনার তৈরি করছি। আমি সোমের্তবান মহিলা (আলিয়া) দাখিল মাদরাসায় শহীদ
মিনার নেই। সে কারণে নিজেই শহীদ মিনার বানানোর উদ্যোগ নিয়েছি। শহীদ মিনার তৈরিতে আমার
খালাত ভাইসহ এলাকার শিশুরা সহায়তা করেছে।
সাদিয়া বলে, ‘আমার মা-ই আমাকে শহীদ মিনার তৈরি করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এবার শহীদ মিনার তৈরিতে ৩শ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া রঙের জন্য আলাদা আরও ৫শ টাকা খরচ হয়েছে। পুরো টাকাটাই আমার মা দিয়েছে। আর রঙ বেরঙয়ের কাগজ ও ফুল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সাজাতে ও নির্মাণে এলাকার শিশুরা সহায়তা করেছে। ২ দিন লেগেছে শহীদ মিনারটা তৈরি করতে।
সাদিয়া বলে, ‘আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। তারা আমাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি তাদের শ্রদ্ধা
করি। আমি চাই দ্রুত আমার মাদরাসায় একটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হোক।’
স্থানীয় বাসিন্দা সেতারা বেগম জানান, ‘২১ ফেব্রুয়ারি এলেই সাদিয়া এলাকার শিশুদের নিয়ে শহীদ মিনার বানায়। আমার ২ সন্তান ও সাদিয়াকে সাহায্য করে। সাদিয়ার মাদরাসায় যদি একটা শহীদ মিনার থাকত তাহলে এমন কষ্ট করতে হতো না। এলাকার সবাই সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারতেন।’
বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মোট
২৩৫টি মাদরাসা রয়েছে। এর মধ্যে ২০৫টি মাদরাসাতেই শহীদ মিনার নেই। বরিশালে ৯২টি কলেজের
মধ্যে ৬৮টিতে এবং ৪৫২টি স্কুলের মধ্যে ৮২টিতে শহীদ মিনার নেই।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সোহেল মারুফ বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যতামূলক। তবে লোকাল ফান্ডের কারণে আসলে তা হয়ে উঠছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা যায়। শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চায়, বরিশাল জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।’