গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
ক্ষমতার অপব্যবহার, কোটি টাকা লোপাট এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারিসহ সাতক্ষীরার পৌর মেয়র তাজকীন আহমেদ চিশতীর বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। এ কারণে তিনি বরখাস্ত হতে পারেন।
১০ মাস আগে দ্বিতীয় বারের মতো সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব তাজকীন আহমেদ চিশতী। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই স্টিয়ারিং কমিটির সাথে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন তিনি।
সাতক্ষীরা পৌরসভা এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কায়সারুজ্জামান হিমেল বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী সাতক্ষীরার পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরবৃন্দ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রকল্পের একটি কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।'
কাউন্সিলরদের অভিযোগ, স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে ৬ বছরে ৩৩ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন তিনি। এসবের প্রেক্ষিতে ১৩ ই জানুয়ারি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে অভিযোগপত্র দেন ১০ জন কাউন্সিলর।
সাতক্ষীরা পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল আলম বাবু বলেন, 'গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি মিটিং হবে, সেখানে অনুমোদন হবে, তারপর কাজটি বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু, সাতক্ষীরার পৌরসভার চিত্রটি ভিন্ন।‘
অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়রের দাবি, নিয়ম মেনেই সব করছেন তিনি। মেয়র তাজকীন আহমেদ চিশতী বলেন, 'সাতক্ষীরা পৌরসভার বসবাসকারী কোনও নাগরিকের কাছে আজ পর্যন্ত কখনো অনৈতিক সুবিধা চাইনি এবং রাষ্ট্রের কাছেও চাইনি।
তিনি আরও বলেন ১০ জন কাউন্সিলর একত্রে আমার বিরুদ্ধে যে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দাখিল করেছেন। যেটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে স্বপক্ষের কাগজপত্রসহ দাখিল করেছি।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, যাদি মেয়র সাহেব ন্যায়বিচার পান, তাহলে সে বরখাস্ত হবেন।
তিনি বলেন আইন অনুযায়ী মেয়র-কাউন্সিলররা পৌরসভার ঠিকাদারি করতে পারেন না। কিন্তু তিনি পৌরসভার ঠিকাদারি করেন। এর আগে পৌরসভার একটি ভবন তৈরির কাজ ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়ে তিনি নিজে করেছেন। আর পৌরসভার টাকা তিনি ইচ্ছা খুশি মত তার দলীয় লোকজন কে দিয়েছে। যেটি আইনবহির্ভূত। আর এসব কারণেই তিনি বরখাস্ত হবেন।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন। তদন্ত প্রতিবেদনটি আমি এখনো হাতে পাইনি। তদন্ত প্রতিবেদনটি পেলে সঠিকভাবে বলতে পারব।'
এদিকে মেয়রের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগের তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি নগরবাসীর।
এদিকে ২০১৬ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ারপর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবদুর রউফ মিয়ার ৭ মে ২০১৬ তারিখে স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল ও একই বছরের ১ ডিসেম্বরের দুটি নাশকতা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩১-এর উপধারা (০১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। একই সঙ্গে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ১-কে অবিলম্বে মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। এরপর হাইকোর্ট ৬ মাস ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করায় মেয়র চিশতি স্বপদে বহাল হন।
সাজেদ/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন