
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৬:২৯ পিএম
আরিফুল ইসলাম। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। শিক্ষক নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৬১ জনের মধ্যে প্রথম হন তিনি। কিন্তু শিক্ষক হতে পারেননি। বরং শিবির তকমা দিয়ে চারটি বছর তার নিয়োগ আটকে রাখা হয়। অবশেষে পুলিশ রিপোর্টে সেই শিবির তকমা থেকে মুক্তি মিলেছে আরিফের। আর আদালতের রুলের কারণে দীর্ঘ চার বছর পর চাকরি ফিরে পেতে যাচ্ছেন আরিফুল ইসলাম।
এ সময় আরিফকে
সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে হেয় হতে হয়েছে। তার জীবনের চারটি বছর হারিয়ে গেছে
অন্ধকারে।
মেধাবী শিক্ষার্থী
আরিফুল ইসলাম পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মালফিয়া গ্রামের জালাল উদ্দিন বিশ্বাসের
ছেলে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫
ফেব্রুয়ারি বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হন এবং একই দিন সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক হিসেবে তার
নিয়োগ ফাইনাল করা হয়। একই মাসের ১৭ তারিখে তার যোগদান করার কথা ছিল। অন্যরা
যোগদান করলেও তার শিক্ষক হিসেবে আর যোগদান করা হয়নি। মেধায় আরিফ প্রথম হলেও
তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক প্রভাবশালী শিক্ষক তার সুপারিশে চাকরি হয়েছে
জানিয়ে ফোনে ঘুষ দাবি করলে আরিফ তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ওই শিক্ষকের
ষড়যন্ত্রে ছাত্রলীগের তৎকালীন কয়েকজন নেতা আরিফুলকে ছাত্র শিবিরের তকমা লাগিয়ে তার
নিয়োগ স্থগিত করে দেয়। সে সময়ের প্রশাসন তদন্তের পর আরিফের নিয়োগ দেয়ার কথা বলে
ফাইল আটকে রাখে।
চার বছর আরিফুল চাকরিসহ তার সামাজিক মর্যাদা ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালতে রিট করার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর রুল জারি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে যোগদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সর্বশেষ পুলিশ প্রতিবেদন ও আদালতের নির্দেশনার পর ২৫৪তম সিন্ডিকেটে আরিফের নিয়োগ ফের চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাকে যোগদান করানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরিফ বলেন, 'আমি ছাত্র
শিবির করি না বরং আমার পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সেটা প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একাধিক পুলিশ তদন্তে আমার পরিবারের সব কিছু উঠে
এসেছে। একই সঙ্গে ন্যায়বিচার না পেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আদালত আমার বিষয়টি বুঝতে পেরে রুল জারি করেছেন। এবার সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় আমার
নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের
রেজিস্ট্রার আতাউর রহমান বলেন, 'আদালতের রুলের কাগজ ও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন
আমরা হাতে পেয়েছি। সে অনুযায়ী নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।'
ইবির বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আরিফকে নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আগের প্রশাসন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার নিয়োগ স্থগিত করেছিল। সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় সবার মতমতের ভিত্তিতে তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা আইন প্রশাসক, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। তার নিয়োগে কোনও বাধা নেই বলে তারা মতামত দিয়েছেন। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন আরিফের পক্ষে এসেছে।’
জেডখান/ফিরোজ