
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২, ০৮:৩৬ পিএম
কুড়িগ্রাম
জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা
আকবর আলীর ভাতা দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় চরম অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তাদের দাবি, আকবর আলীর
জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও
সমাধান হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হওয়ায়
বিনা চিকিৎসায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি
৯৪ বছর বয়সী ওই মুক্তিযোদ্ধার
মৃত্যু হয়।
অনুসন্ধানে
জানা যায়, আকবর আলী
উপজেলার ধুলারকুঠি গ্রামের
মৃত বাবন শেখের পুত্র। তিনি ৪৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি
বিবাহিত ছিলেন। তার ৫ ছেলে
ও ২ মেয়ের মধ্যে যুদ্ধের আগে তিন সন্তান
জন্মগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ১৭নং বই ৪০১৪৭
ক্রমিক, লাল মুক্তিবার্তায়-৩১৬০৪০৫২০
ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ২১
মে বেসামরিক গেজেট ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় গেজেট
নং ১০৬৪-এ তার নাম
রয়েছে।
তিনি ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২০ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্মতারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮ সালের ১১ আগস্ট। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ মে। অথচ তার বড় ছেলে আমির হোসেনকে তার থেকে বড় দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বাবার থেকে ছেলে বড়। জাতীয় পরিচয়পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের বয়স দেখানো হয় ১৯৬০ সালের ২ মার্চ।
জাতীয়
পরিচয়পত্রের এমন ত্রুটির কারণে
প্রায় দুবছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা
বন্ধ রয়েছে। জন্মতারিখ সংশোধনের
জন্য নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন বিভাগের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি
আকবর আলীর সন্তানদের। জন্মতারিখ সংশোধন হওয়ার আগেই আকবর
আলী মারা যান।
সহযোদ্ধা
হযরত আলী বলেন,
‘আমি, আকবর আলী ও
জেঠাতো ভাই লস্কর আলী তিনজনই যুদ্ধ
করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ভোটার আইডির
সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা
বন্ধ হয়ে যায়।’
বড়
ছেলে আমির হোসেন বলেন,
‘জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার
বয়স দিছে ১৯৭১ সাল। আমাদের
ভাইবোনদের অনেকের বয়স তুলে দিছে
১৯৫০, ১৯৬০ এমন অনেক
সমস্যা করছে। এই জন্মতারিখ
ঠিক করার জন্য যেখানেই
গেছি খালি ট্যাহা-ট্যাহা
করে। তাও আমগো বাবার
জন্মতারিখ ঠিক হয়নি। আমরা
ব্যর্থ হয়া গেছি গা।’
নাতি রঞ্জু বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার দাদা-দাদি এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল তোলা হয়েছে। তারা তো শিক্ষিত না। বয়স কী, এগুলো বোঝে না। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকা গিয়েছি। সেখানে বলা হয় আমরা পারব না, এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গিয়েছি, সেখানে আমরা পাত্তাই পাই না। বহু টাকা-পয়সা খরচ করেও কোনো লাভ হয়নি। দাদা মারাই গেল।’
সাবেক
ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মরহুম আকবর আলী প্রকৃত
একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক
করার জন্য আমরা বহু
চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হলো না
তার সঠিক কারণ আমরা
জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে
আমাদের দাবি, সঠিক তদন্ত
করে মৃত আকবর আলীর
ভাতা ফের চালু করে দিতে
তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা
জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন,
‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদনটি বিবেচনা করে
“গ” ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যে এই আবেদনটি নিষ্পত্তি
করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত
সম্পন্ন করে প্রতিবেদন সাবমিট
করা হয়েছে।’
রংপুর
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন
বলেন, ‘আমি ঢাকায় মিটিং
শেষ করে রংপুর ফিরছি।
বিষয়টি আমার নজরে এলো।
আমি যত দ্রুত সম্ভব
সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করব।’
এএমকে/ফিরোজ
![]() | ![]() ![]() | ![]() | ||
![]() | ![]() | ![]() | ||
![]() ![]() | ![]() ![]() | |||
![]() |
| ![]() |