• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঘুষ ছাড়া ফাইল জমা হয় না সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২, ১১:০৩ পিএম

ঘুষ ছাড়া ফাইল জমা হয় না সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে

গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো ধরনের মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের ফাইল জমা হয় না। অনেক সময় ঘুষ নেয়ার জন্য শোরুমকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অফিসেই রয়েছে দালাল চক্র। যাদের কাছে লেনদেন করলে সহজেই ফাইল জমা হয়।

বিআরটিএ অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সব কাগজ রেডি করে মোটরগাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক শোরুমের মাধ্যমে কাগজ জমা দিতে বলেন।

শো-রুমের কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতিটি ফাইল জমা দিতে অতিরিক্ত চার হাজার টাকা দেয়া লাগবে। টাকা কম দিতে চাইলে আবুল কাশেম মটরসের কামরুল জানান, এই টাকা আমাদের কম নেয়ার সুযোগ নেই। বেশিরভাগ টাকাই দিতে হয় বিআরটিএ অফিসে ইন্সপেক্টর সহকারী পরিচালককে। দুয়েক টাকা আমাদের থাকে।

ব্যাপারে বিআরটিএ-এর ইন্সপেক্টর রামকৃষ্ণ পোদ্দার বলেন, ‘শোরুম বিআরটিএ-এর নামে টাকা চাইল কি? কার নামে টাকা চাইলো? সেটা আপনারা বুঝুন। শোরুমের অভিযোগ দেখার জন্য তো সরকার আমাকে নিয়োগ করেনি।’

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে বিআরটিএ অফিসের কয়েকজন দালালেরা ফাইল জমা দিতে যাওয়া ব্যক্তিদের অফার করে বলছে, চার হাজার লাগবে না আড়াই হাজার টাকা দেন ফাইল জমা করে দিচ্ছি। এখানে শোরুমের সব সিল-সই রেডি আছে। কিছু টাকা দিলেই ফাইল নিয়ে নেবে। আমার কাছে দিতে পারেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআরটিএ অফিসে ধরনের দালাল রয়েছে বেশ কিছু। তা ছাড়া অনেক কারণে অফিসাররা সরাসরি ঘুস নেন না। তাদের ঘুষ নেয়ার মাধ্যম দালালরা। তবে, সব দালালদের কাছ থেকে ফাইল অবৈধ টাকা জমা নেন অফিসের অনিয়োগকৃত কর্মচারী জাহাঙ্গীর শরিফ।

জাহাঙ্গীর নেয় রেজিস্ট্রেশনের টাকা আর শরিফ অফিস সহায়ক গফফার নেয় ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর টাকা। তবে এই টাকা তাদের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করার দায়িত্ব ওই অফিসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া আমিনুর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সাইফুলের। প্রতিদিন সন্ধার পর তারা টাকা ভাগ করেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করব এবং প্রয়োজনে শোরুমের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ভুক্তভোগী আবু তালহা জানান, ফাইল জমা দিতে না পেরে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে বিআরটিএ অফিসে যান তিনি। কিন্তু অফিসের কোনো কর্মকতা তার অভিযোগ নেননি। অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেন।

সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীরা শহিদু আলম, মিঠু, হোসেন আলী জানান, মোটরযান এনডোর্সমেন্ট, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফেকেট, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের শ্রেণি পরিবর্তন বা সংযোজন/ধরন পরিবর্তন/ পিএসভি/তথ্য সংশোধন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সাতক্ষীরা বিআরটিএ কার্যালয়ে যেকোনো কাজ করতে গেলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ।

ঘুষের টাকা ঠিকঠাকভাবে না পেলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়। দালালের মাধ্যমে কাজ না করলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে বেড়ে যায় ঘুষের পরিমাণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দালাল বলেন, বিআরটিএ জেলা কার্যালয়কে ঘিরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন দালালের মাধ্যমে ঘুষের টাকা গ্রহণ করে থাকেন অফিস সহায়ক মো. আব্দুল গফফার, সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি.) এএসএম ওয়াজেদ হোসেন ইন্সপেক্টর রামকৃষ্ণ পোদ্দার।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, নির্দিষ্ট তথ্য পেলে অনিয়মকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এই ঘুস গ্রহণে যেসব দালাল জড়িত তাদের তথ্য সংগ্রহ চলছে।

এএমকে/ডাকুয়া

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ