প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২, ০৮:১৮ পিএম
‘আগোত (পূর্বে) তো চরের সউগ (সব) জমিত হামরা (আমরা) তাংকু (তামাক) আবাত
করছিনো। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ দেয়ায় এখন হামরা সূর্যমুখী আবাদ করি। এতে
হামার তাংকুর চেয়ে বেশি লাভ হয়।'
এভাবেই বুক ভরা স্বপ্ন
নিয়ে সিটি নিউজ ঢাকাকে এ কথা বলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরের তিস্তার চরে তামাক
চাষ বাদ দিয়ে চরে সূর্যমুখী আবাদ করা কৃষক শাহীন মিয়া।
১৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার)
দুপুরে তিনি বলেন, 'প্রতি বছর বন্যায় হামরা ক্ষতির শিকার হই। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে
উঠতে সারা বছর চলে যায়। ঠিকভাবে ফসল আবাদ করে ঘরে তোলা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার
অনেক সময় ঋণের চাপে ফসলের টাকাও বাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো না। তাই হামরা বিনামূল্যে
বীজ আর সুদ ছাড়া ঋণ পেয়া চরোত তাংকু আবাত করছিনো।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিস্তার চরসহ উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ৫০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চরে। প্রতি বিঘায় ৫ হাজার টাকা খরচ হলেও ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায় সহজে। যার কারণে ধীরে ধীরে চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন সূর্যমুখী চাষে। চাষিদের সূর্যমুখী চাষে আরও সম্পৃক্ত করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সূর্যমুখীর বীজ, সার দেয়া হয়েছে। তিন বছর ধরে উপজেলায় এ ফসলের চাষ হচ্ছে।
কৃষক শাহীন মিয়া বলেন, ‘কৃষি
অফিসের স্যারেরা হামাক সূর্যমুখী আবাদ এর জন্য বিনামূল্যে বীজ দিছে। এবার ২০ শতক
জমিত কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথম সূর্যমুখীর চাষ করছি হামরা। সূর্যমুখী চাষে
খরচ ও শ্রম কম হওছে। ক্ষেতে বীজ বপনের ১২০ দিনের মাথাত ফুল থেকে বীজ পাওয়া যায়।
এই বীজ থেকে তৈরি হবে তেল। আর তাই এ ফসল আবাত করি বেশি লাভ হওছে হামার।'
তবে সফলভাবে সূর্যমুখী
ফলালেও চিন্তার ভাঁজের কথা শোনালেন কৃষক পত্নী ফেন্সি বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন,
'প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে ক্ষেতে ফুলের সঙ্গে সেলফি তুলবার। আর গাছ দুমড়ে-মুচড়ে
ক্ষেতের ভেতরে ঢুকছে। আবার অনেক সময় ফুলও ছিড়ে নিয়ে যায়। তাই সারা দিন ক্ষেত
পাহারা দেয়া লাগছে।’
এদিকে, চলতি মৌসুমে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে চরের ক্ষেতগুলো। সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থী। সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ঘুরতে আসা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকে। সন্তানদের এর কারণ ব্যাখ্যা করেছি এবং দেখিয়েছি।’ শহরের কোলাহল থেকে একটু প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারকে নিয়ে এখানে আসা বলেও জানান তিনি ।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি
কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের তুলনায়
সূর্যমুখী চাষে মূলধন কম লাগে, রোগবালাই নেই বললেই চলে, লাভও দ্বিগুণ। আমরা
সূর্যমুখীর চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সব সময় উৎসাহিত করছি। যারা সূর্যমুখীর চাষ
করেছেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’