প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ০৬:৫০ পিএম
শীত-গ্রীষ্মে নাব্য সংকট আর ঘনকুয়াশা, বর্ষায় অতিবন্যা-এমন অসংখ্য দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। বিঘ্নিত হয় ফেরি পারাপার। তাই বছরজুড়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও যানবাহন চালকদের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)
সূত্র জানায়, প্রায় ৫০ বছর আগে দুইটি ছোট ফেরি নিয়ে আরিচা-নগরবাড়ি ও আরিচা-গোয়ালন্দ
রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছিল। পদ্মা-যমুনায় ডুবোচর জেগে ওঠায় পলি জমে নদী সংকুচিত
হওয়ায় ১৯৯৮ সালে আরিচা ঘাট পাটুরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। গোয়ালন্দ ঘাট সরে আসে দৌলতদিয়ায়।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় নগরবাড়ি ঘাটের গুরুত্ব কমে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য)
আব্দুস সালাম জানান, ছোট-বড় ১৮টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের কাজ চলছে। একটি
ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেরামতে রয়েছে। এই রুট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই
হাজারের মতো ছোট-বড় যানবাহন পারাপার হয়। অন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট
নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছে। তবে ঈদ বা বড় কোনো
ছুটির সময় এই ঘাটে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
সরেজমিনে পাটুরিয়া ফেরিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের অন্যতম
এই নৌরুটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও ঘাট এলাকায় নেই পর্যাপ্ত
শৌচাগার। প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাটুরিয়া ঘাটে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র দুটি
টার্মিনাল। দুটি টার্মিনালে রয়েছে মাত্র ১২টি শৌচাগার।
চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স বাসের চালক রহমান পাটোয়ারি জানান, ‘ঘাটে বেশিরভাগ সময়ই যানজট থাকে। ফেরিগুলো বহুবছরের পুরনো। তাই এগুলো স্রোতের বিপরীতে চলতে পারে না। ফেরি চলাচলে সমস্যা হলেও ঘাটে যানজট দেখা দেয়। নাব্য সংকট, ফেরি স্বল্পতা, ঘনকুয়াশা এলেই ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
ঘাটে বেশি দুর্ভোগে পড়ে ট্রাকগুলো। একটু বিপর্যয় হলেই
দিনের পর দিন অসল বসে থাকতে হয়। ট্রাক চালক সামাদ মিয়া বলেন, ‘ঘাটে একটু সমস্যা হলেই
আমাদের ট্রাক চালকদের অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। যানজটে বাসগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে
পাড় করা হলেও ট্রাকগুলোকে বেশ কয়েকদিন ঘাটে থাকতে হয়।’
হানিফ পরিবহনের যাত্রী আবু রায়হান জানান, ঘাটে সারা বছরই
কোনো না কোনো সমস্যা থাকে। ঘাট এলাকায় ভালোমানের খাবার হোটেলও নেই। যাও আছে সেগুলোতেও
গলা কাটা দাম। আর ব্যবহার উপযোগী টয়লেট না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। কর্তৃপক্ষের
এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত।’
আরেক যাত্রী রাজ্জাক হোসেন জানান, আমার বাড়ি খুলনায়। আমি
নিয়মিত এই রুটে যাতায়াত করি। ঘাটে এত ভোগান্তি পোহাতে আর ভালো লাগে না।’
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা যাত্রী ও যানবাহন চালকদের সেবা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করি। তারপরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে কিছু করার থাকে না। ঘাট এলাকায় খাবার হোটেল, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নেব।’
ডাকুয়া/