• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

রফতানি বন্ধ, বিপর্যস্ত কুষ্টিয়ার পান চাষিরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ১২:৪১ এএম

রফতানি বন্ধ, বিপর্যস্ত কুষ্টিয়ার পান চাষিরা

শৈবাল আদিত্য

দীর্ঘদিন ধরে রফতানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় বিপর্যস্ত কুষ্টিয়া জেলার পান চাষিরা। এ ছাড়ামড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে পানে ব্যাকটেরিয়াজনিত পান পচা রোগের প্রাদুর্ভাব। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার পান চাষিরা। অনেকেই ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ। ফলে দিন দিন কমতে শুরু করেছে পান চাষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রফতানির ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ধাপে ধাপে এই নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত হয়।

এরপর ইইউ পান রফতানিতে কতিপয় শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হতে হবে। উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইপপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করত হবে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব হতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সার্টিফিকেট দিতে হবে। কিন্তু প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় এখনও পান রফতানি বন্ধই রয়েছে।


কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহে দিন ভাগ করে পানের হাট বসে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া বাজারে সপ্তাহের রোববার বৃহস্পতিবার বসে সবচেয়ে বড় হাট। কুষ্টিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহসহ অন্যান্য জেলার চাষিরাও পুটলি বেঁধে পান নিয়ে এসে এসব হাটে পসরা সাজান।

এখানকার হাটে দুবছর আগেও পন হিসেবে (৮০ পিস পানে এক পন) পান গুণে কৃষকের হাতে টাকা গুজে দিয়ে যেতেন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপে বাংলাদেশের পানের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে করোনার কারণে দেশের অভ্যন্তরেও পানের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় গত প্রায় এক-দেড় বছর ধরে পানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

ভেড়ামারার জুনিয়াদহ এলাকার পান চাষি আসমত আলী বলেন, ‘বাজারে পানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। আগে যেখানে এক পন পান বাজারে প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে এখন সেই পান কমতে কমতে ৫০ থেকে ৭০-৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আবার পান চাষের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছি না। অব্যাহত লোকসানের কারণে চরম হতাশ হয়ে অনেক পান চাষিই দীর্ঘদিনের পানের বরজ ভেঙে ফেলছেন।’

পান চাষিরা বলছেন, আগের মতো যদি পান বিদেশে রফতানি করা যায়, তাহলে তারা হয়তো আবার লাভের মুখ দেখবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বিগত বছরের চেয়ে জেলায় বছর পানের আবাদ কিছুটা কমেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। আর বছর জেলায় হাজার ৫৪ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায়ই কম বেশি পান চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয় বেশি পান উৎপাদন হয় ভেড়ামারা উপজেলায়। এরপর সদর উপজেলায়। এবার ভেড়ামারা উপজেলায় ৭১৮ হেক্টর জমিতে এবং সদর উপজেলায় ৬০৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক কুষ্টিয়ার বাজারে বর্তমানে পানের দাম কিছুটা কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'মান ভালো হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই কুষ্টিয়া জেলার পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁচামালের বাজার প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। কারণে হতাশ হওয়া চলবে না।'

পান চাষ লাভজনক দাবি করে তিনি কৃষকদের হতাশ না হয়ে চাষ ধরে রাখার আহ্বান জানান।

এএমকে

 

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ