প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২, ০৪:২৫ এএম
দশদিন আগে আট ভাইবোন
হারান বাবাকে। ঘটনা কক্সবাজারের চকরিয়ার।
আজ সকালের যে খবরটি সামাজিকমাধ্যমে
সবাইকে নাড়া দিয়েছে। আট
ভাই-বোন একসঙ্গে গিয়েছিলেন
বাবার শেষকৃত্য জানাতে। ফেরার পথে ঘটে মর্মান্তিক
দুর্ঘটনা। এতে বোনের সামনেই
প্রাণ হারায় পাঁচ ভাই।
গত
৩০ জানুয়ারি সুরেশ চন্দ্র মারা গেছেন। সুরেশের
মৃত্যুর শোক এখনও ঠিকমতো
কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার
পরিবার। এর মধ্যেই মঙ্গলবার
(৮ ফেব্রুয়ারি) আবার সুরেশের বাড়িতে
কান্নার রোল পড়ে গেছে।
মৃত
সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,
উঠানে সারি করে রাখা
অনুপম শীল (৪৮), নিরুপম
শীল (৪৫), দীপক শীল
(৪০), চম্পক শীল (৩৮) ও
স্মরণ শীলের (৪৬) মরদেহ।
পাশেই
ছিলেন স্বামী-সন্তান হারানো বৃদ্ধা মানু রানী সুশীল
(৭০)। ছেলেদের লাশের
পাশে বসে বিলাপ করছিলেন।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘বাপ
(সুরেশ) মারা গেল ১০
দিন। এই শোক কাটিয়ে
না ওঠার আগেই আবার
৫ সন্তানকে কেড়ে নিলা। এ
কোন পরীক্ষায় ফেললা ভগবান। বেঁচে থেকে আর লাভ
কী! কার জন্য বাঁচিয়ে
রাখলা! যারা আমার ছেলেদের
কেড়ে নিয়েছে, তুমি তাদের বিচার
করো ভগবান।’
বিলাপ
করতে করতে নিহত অনুপম
শীলের স্ত্রী পপি শীল বলেন,
‘আজ আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ
হওয়ার কথা। খাবারের ব্যবস্থা,
প্যান্ডেল করা, অতিথি নিমন্ত্রণ
থেকে শুরু করে সব
কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু
সেই শ্রাদ্ধের আগে সব শেষ
হয়ে গেল। ছোট ছেলেমেয়েরা
এখন পথে বসবে।’
দুর্ঘটনার
কবল থেকে রক্ষা পায়
সুরেশ চন্দ্রের মেয়ে মুন্নী সুশীল
(২৮)। কান্না কণ্ঠে
ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি
বলেন, “মন্দিরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে একসঙ্গে
হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। মালুমঘাট
খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালসংলগ্ন রাস্তা পার হওয়ার জন্য
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় দ্রুতগতিতে
একটি পিকআপ ভ্যান আমাদের চাপা দেয়। এতে
আমার এক ভাইয়ের ধাক্কায়
মাটিতে ছিটকে পড়ে বেঁচে যাই।
আমি ছিটকে পড়লেও পিকআপের নিচে পড়ে ৫
ভাই। তারা যন্ত্রণায় চিৎকার
করছিলেন। ওই অবস্থাতেই পিকআপের
চালক গাড়ি চালিয়ে কয়েক
ফুট সামনে নিয়ে যান। তখনও
বেঁচে ছিল সবাই। অবস্থার
তখন বেগতিক। তখন তাদের মেরে
ফেলতে গাড়িটি পেছনের দিকে আসে। রাস্তায়
পড়ে থাকা আটজনকে আবার
চাপা দিয়ে কক্সবাজারের দিকে
পালিয়ে যায়। আমি শুধু
তাকিয়ে দেখছিলাম। তখন কিছুই করার
ছিল না আমার। দ্রুত
গতিতে চলে যাওয়ায় গাড়িটির
নম্বর দেখতে পাইনি।”
ডুলাহাজারা
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম বলেন, “বাবার মৃত্যুর ১০ দিন পার
না হতেই পাঁচ ছেলের
মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের
ছায়া নেমে এসেছে। মালুমঘাট
হাসপাতালের পাশে শ্মশানে তাদের
সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
মালুমঘাট
হাইওয়ে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক
সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর পিকআপটি নিয়ে
এর চালক পালিয়ে গেছেন।
পিকআপ ও এর চালককে
শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় এখনও
কোনো মামলা হয়নি।’
মঙ্গলবার
ভোর পাঁচটার দিকে পিতার শ্রাদ্ধ
শেষে বাড়ি ফেরার পথে
রাস্তা পার হতে গিয়ে
পিকআপ ভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৪
ভাই। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় আরও এক ভাইয়ের
মৃত্যু হয়। এর দশদিন
আগে তাদের বাবা সুরেশ চন্দ্র
শীল মারা যান।
জনি