
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম
মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও
জেলার সীমান্ত ঘেষা হরিপুর উপজেলার
বকুড়াল গ্রামের যুবক ফয়সাল আহমেদ
নাহিদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। পড়াশোনার পাশাপাশি
মৌ খামার করে হয়েছেন নতুন
উদ্যোক্তা। নাহিদ তার খামারে এখন দেখছেন মধুময়
সম্ভাবনা।
নাহিদের গড়েতোলা মৌ খামারে এক বছরেই মধু উৎপাদনের প্রসার ঘটেছে ৫ গুণ। তার উৎপাদিত মধু কিনতে রোজ ক্রেতা আসেন বাড়িতে। আবার কুরিয়ারের মাধ্যমে তার মধু কিনতে বিভিন্ন ক্রেতাও আগ্রহ দেখায়। ক্রেতারা তার উৎপাদিত মধু কিনছেন প্রতি কেজি ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে।
সিটি
নিউজের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ জানান, তার বাবা মারা
যাওয়ার পর নিজ গ্রামে
গতবছর লকডাউনে মৌমাছি চাষ শুরু করেন
তিনি। এর আগে প্রশিক্ষণ
নিয়েছেন মৌ খামারের ওপর।
রপ্ত করা প্রশিক্ষণ কাজে
লাগান মৌমাছি দিয়ে মধু আহরণের
জন্য।
টিউশনের জমানো ৭ হাজার টাকায় কেনা দুটি মৌমাছির বাক্স দিয়ে তার উদ্যমি যাত্রা শুরু হলেও এখন তার রয়েছে ১০ টিরও বেশি মৌ বাক্স। আর এই বাক্সগুলো থেকে প্রতি মৌসুমে ৮-১০ হাজার টাকার মধু পান তিনি। গ্রামের সরিষা ক্ষেত, লিচুর মুকুল, কুমড়ো ক্ষেত থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন নাহিদ।
মৌমাছি
দিয়ে মধু সংগ্রহের পক্রিয়া
সম্পর্কে নাহিদ বলেন, ‘মৌবাক্স ফসলের মাঠে রেখে দিই।
দিনের বেলা মৌমাছিগুলো ফুল
থেকে নেকটার (ফুলের রস) সংগ্রহ করে
এবং প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে ৭ থেকে ১০
দিনের মধ্যে মধুতে পরিণত করে। নেকটার সংগ্রহের
সময় তাতে পানির পরিমাণ
থাকে ৫০-৬০ ভাগ।
পরবর্তীতে সেটা সম্পূর্ণ হাতে
স্পর্শ ছাড়া মধু সংগ্রহের
মেশিন দিয়ে সংগ্রহ করতে
হয়। মেশিনে সংগ্রহের ফলে মৌচাক কিংবা
বাচ্চা কিছুই নষ্ট হয় না।’
উদ্যোক্তা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ খামার শুরু করেছি। শুরুটা শখের বশে হলেও আশা করছি আমি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারব। দিনে দিনে আমার স্বপ্নের প্রসার ঘটছে। এখন আমার লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছি। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যার শুরুটা মূলত এখান থেকেই করেছি। আমি প্রত্যাশা করি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ও সহযোগিতা পেলে আমার স্বপ্ন দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হবে।’
মধু
ক্রেতা ডা. আনসারুল ইসলাম
বলেন, ‘বাজারে খুব একটা খাঁটি
মধু মিলে না। নাহিদের কাছে খুব সহজেই
খাঁটি মধু পাই। আমি
নিয়মিত তার খামার থেকে
মধু কিনছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম বলেন, ‘নাহিদের মৌ খামারটি এই উপজেলায় বেশ আলোচিত। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই খামার তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী।’
এই
বিষয়ে কথা হয় হরিপুর
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল
হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মৌ
খামার একটি দারুণ উদ্যোগ।
এতে পরাগায়ন ঘটে এবং ফসলের
ফলন ১৫%-২০% বৃদ্ধি
পায়। ভালো ফলনের জন্য আমরা
কৃষককে ফসলের মাঠে দুটি করে
মৌ বাক্স রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
এএমকে