চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারত। দেশটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেন দেশে না ছড়িয়ে পড়ে সে জন্য সকল সীমান্ত বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। যার ফলে ২৬ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে সীমান্ত।
দুদেশে আটকা পড়াদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে কয়েকটি সীমান্ত নির্ধারণ করে দেয় ভারত ও বাংলাদেশের সরকার। তবে নিজ দেশে ফিরে যেতে লাগবে করোনার নেগিটিভ সার্টিফিকেট। সঙ্গে দূতাবাস থেকে নিতে হবে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট।
নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য সরকার যে কয়েকটি সীমান্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে এর মধ্যে অন্যতম চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বন্দর। গত ১৭ এপ্রিল থেকে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা ফেরত আসছেন। অন্যদিকে দেশে আটকা পড়া ভারতীয়রাও নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছেন।
দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে গত ১১ দিনে ২১৮ নারীসহ দেশে ফিরেছেন মোট ৬৯৩ বাংলাদেশি। এর মধ্যে চার নারীসহ মোট ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে তারা করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কিনা এখন পর্যন্ত তা জানা যায়নি।
করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের চুয়াডাঙ্গা করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আর বাকিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য পজিটিভ ৯ জনের নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করার জন্য আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এসএসএম মারুফ হাসান বলেন, 'চূড়ান্ত ফলাফল আসলেই জানা যাবে তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা।'
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কলকাতা দূতাবাস থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিয়েছেন ৭৯৯ বাংলাদেশি। যা বাংলাদেশের ইমিগ্রশনের হাতে পৌঁছেছে। নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নেয়ারা যেকোনো সময় বন্দরটি দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন।
দর্শনা বন্দর দিয়ে ফেরত আসাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থলবন্দরটিতে ছয় সদস্যের মেডিকেল টিম কাজ করছেন। এ ছাড়া চারজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক বন্দরে কাজ করছেন। পুলিশি পাহারায় ফেরত আসাদের বাস, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যোগে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নেয়া হচ্ছে। র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ফেরত আসাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বন্দরে যাত্রীরা পৌঁছালেই প্রত্যেককে পানির বোতল, কেক, বিস্কুট ও বিভিন্ন ধরনের নাস্তা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে জেলা প্রশাসন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
এ দিকে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিন্মমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল মেহমান সিলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, 'ভারত থেকে যারা ফিরছেন তারা এ দেশের নাগরিক। এ জেলার মেহমান। তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকা-খাওয়ার সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলার সম্মান জড়িয়ে আছে। কোনো প্রকার ত্রুটি হলে তা বরদাশত করা হবে না।'
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইন্সটিটিউট, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং পিটিআই-এ সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। এগুলোতে জায়গার সংকুলান হওয়ায় এখন পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর , কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে পাঠানো হচ্ছে।
এএএম/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন