সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বেতবাড়ী গ্রামে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় ১০ মাস আগের এ ঘটনায় উল্লাপাড়া থানায় হয়েছে মামলা। এরপরেই মামলার বিবাদীদের থানায় ডেকে পাঠান ওসি দীপক কুমার দাস। কিন্তু বিবাদীরা থানায় যায় না।
বিবাদীরা থানায় না আসায় তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন ওসি। এর জেরে প্রতিরাতে বিবাদীদের ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রাম তছনছ করাসহ হয়রানি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকার বাণিজ্য করতে থাকে তারা।
পুলিশকে চাহিদা মতো টাকা না দিলেই গ্রামে অভিযান চলত। অভিযানের নামে বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুরসহ টাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে নিত তারা। এ ছাড়া একাধিক ব্যক্তিকে মামলা ছাড়ায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের থানায় নিয়ে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কর হতো। পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হতো।
উক্ত নির্যাতনের বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সব নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন তারা। এরপরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়। আর এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি দীপক কুমার দাস। এরপর থেকে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়া ব্যক্তিদের একে একে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে নতুন নতুন মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠাতে থাকেন ওসি।
গত ২৪ মে রাতে উল্লাপাড়া থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সাদা পোশাকে এসে বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন প্রামাণিককে (৭০) আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। লোহার পাইপ দিয়ে সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করেন খোদ ওসি। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই উল্লাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
২৫ মে সাইফুদ্দিন প্রামাণিককে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার শারীরিক অবস্থা দেখে ও জবানবন্দি নিয়ে জামিন দেন। তার চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার আদেশ দেন বিজ্ঞ বিচারক।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সুস্থ হয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হন ওই বৃদ্ধ। ওই দিনই আদালতে মামলা করেন তিনি। আর মামলায় এসব অভিযোগ করেন বৃদ্ধ সাইফুদ্দিন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার ওসি দীপক কুমার দাস বলেন, 'এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তার বিরুদ্ধে অনেক আগের একটি মামলা ছিল। তাকে সেই মামলাতেই গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমি কিংবা আমার কোনো পুলিশ তাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেনি। আদালত তদন্ত করলে সঠিক ঘটনা বের হয়ে আসবে।'
এএএম/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন