
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০৭:০২ পিএম
মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে।
রাবার ড্যামটি নির্মাণ করছে বাংলাদেশ
নৌবাহিনী পরিচালিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ডস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ৫০০ মিটার ভাটিতে রাবার ড্যামের নির্মাণ কর্মযজ্ঞ চলছে।
২০২৩ সালের ৩০ মে মাসের মধ্যে এর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মহানন্দা নদীতে রাবার
ড্যাম নির্মিত হলে কৃষি খাতের সম্প্রসারণ হবে। ড্যামটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলে বাড়বে
ফসল ও মাছের উৎপাদন। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অর্থনৈতিতে সমৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত
হবে।
বারার ড্যাম নির্মিত হলে কীভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি
অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে, তা পাওয়া যায় ‘মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প
প্রস্তাবনায়’। এ প্রকল্পটি এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, এ প্রকল্পের ফলে মহানন্দা নদীর প্রবাহ ও নিষ্কাশন সক্ষমতা
বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিকাজে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে ৫৫
কোটি ৮৩ লাখ টাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া এতে দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকার মৎস্য
উৎপাদনের মাধ্যমে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। ৩৬ কিলোমিটার নদী
খনন, প্রায় সাত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, রাবার ড্যাম নির্মাণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন
কার্যক্রম থাকবে এ প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পের পরিকল্পনায় এ প্রকল্পটিকে লাভজনক হিসেবে
উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর নাব্যতা ঠিক
রাখতে ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয় ২০১৭
সালের জানুয়ারিতে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে
(একনেক) পাস হয়। এ জন্য ১৮৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রকল্প
প্রক্রিয়াকরণ করে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান
বিভাগের সেচ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অনুসারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। পানি উন্নয়ন
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ৩৫৩ মিটার দীর্ঘ রাবার ড্যামটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে শুষ্ক
মৌসুমে মহানন্দায় পানি ধরে রেখে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিকতর সেচ সুবিধা নিশ্চিত
করা যাবে। আর এতে এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ হবে।
এ ছাড়া মহানন্দা নদী খননের ফলে নদীর গভীরতার পাশাপাশি
বাড়বে নাব্যতা ও পানি। এতে মৎস্য প্রজনন ও আহরণের আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। বদলে যাবে এই
এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
সালেহ আকরাম বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি হ্রাস পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে
যায়। ফলে গভীর-অগভীর নলকূপ দ্বারা সেচকাজ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। মহানন্দায় রাবার ড্যাম
নির্মাণ সম্পন্ন হলে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে চাষিদের। কম খরচে কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের
কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। রাবার ড্যাম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ
অবদান রাখবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি
অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আশরাফুল আরিফ বলেন, ‘কৃষিনির্ভর জনপদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
এ জেলার অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। রাবার ড্যাম কৃষি উপযোগী একটি প্রকল্প। এটি
বাস্তবায়ন হলে চাষিদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে। বাড়বে ফল, ফসল ও মাছের উৎপাদন। ফলে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত হবে। এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক
জীবনধারা বদলে যাবে।’
২০১১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সফরে এসে স্থানীয় মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহানন্দা নদীতে আন্তর্জাতিক মানের রাবার
ড্যাম নির্মাণের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নিতে
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশনে এ সংক্রান্ত পিইসি সভা
হয় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালানোর জন্য আইডব্লিউএমকে নিয়োগ দেয়া
হয়। আইডব্লিউএম এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ইআইএ প্রতিবেদন দাখিল করে। তার
ভিত্তিতেই প্রকল্পটির পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়।
জেডখান/এম. জামান