
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২, ১১:১২ পিএম
মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও
সদর উপজেলার বোচাপুকুর এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি খেজুরের বাগান। চার বছর ধরে শীত মৌসুমে
এই বাগানের খেজুরের রস থেকে উৎপাদন হচ্ছিল গুড়। তবে এই মৌসুমের মাঝামাঝি চাঁদাবাজের
হুমকিতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে গাছিদের।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের এই বাগানে ৫০০টি ছোট-বড় খেজুর গাছ ছিল। ২০১৮ সালে রাজশাহীর কয়েকজন গাছি বাগানটি লিজ নেন। তারা গাছের রস সংগ্রহ করে তৈরি করছিল গুড়। আস্তে আস্তে খেজুরের রস ও রস থেকে তৈরিকৃত গুড় পুরো জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গুড় যাচ্ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন মানুষ এই বাগানে ভিড় করত বাগান দেখতে, খেজুরের রস খেতে কিংবা গুড় তৈরি দেখতে।
প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীর গাছিরা এই বাগানে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি শুরু করেন। তবে তাদের
অভিযোগ কিছু দিন আগে একদল যুবকের দেয়া হুমকির ভয়ে গুড় তৈরি বন্ধ করে তারা এলাকা ছেড়ে
পালিয়েছেন।
শনিবার
(২২ জানুয়ারি) সকালে খেজুরের গুড় তৈরির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে গাছিদের
দেখা যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় গাছি দলের প্রধান কারিগর সুজন আলীর সঙ্গে।
এই
বিষয়ে কারিগর সুজন আলী মুঠোফোনে জানান, কিছুদিন আগে এক রাতে কয়েকজন লোক এসে বিনামূল্যে
খেজুরের রস খেতে চায়। তাদের রস খেতে না দিলে কথাকাটাকাটি হয়। এতে তারা নানা রকম হুমকি দেয়। রাতের সময় এসে হত্যা করবে বলে ভয় দেখায়।
সুজন আলী বলেন, ‘খেজুর বাগানে এক-দুই দিন পর পর এসে তারা এভাবে চাঁদা দাবি করে ও হুমকি দেয়। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা চাদা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না পেয়ে আমরা বাধ্য হয়ে গুড় তৈরির কাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে আসি।’
চাঁদা
দাবি করা ও হুমকি প্রদানকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে সুজন আলী জানান, চাঁদা দাবি করা ও
হুমকি প্রদানকারীরা রাতের আঁধারে আসত, নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাদের পরিচয় দিত না।
তাই তাদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে
সুজন আলী স্থানীয় প্রশাসন বিভাগের কারও কাছে অভিযোগ করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান,
আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। রাতের আঁধারে তারা যদি সেখানে আমাদের মেরে ফেলত কে আসত আমাদের
বাঁচাতে? তাই প্রাণের ভয়ে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাইনি।
তিনি
আরও বলেন, ‘আমরা মাঘ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতাম, কিন্তু
হুমকি ও চাঁদা দাবি করার কারণে গত সপ্তাহে আমরা বাড়ি চলে আসি।’
এ বিষয়টি শুনে স্থানীয়রা জানান, এটি খুব দুঃখজনক বিষয়। এতে কিছু অসাধু লোকের জন্য আমাদের
জেলার সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ বিষয়গুলো এড়াতে প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।
ঠাকুরগাঁও
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
গাছিরা বিষয়টি যদি আমাকে অবগত করত তাহলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। ভয়
পেয়ে গুড় তৈরির কাজ বন্ধ না করে তাদের উচিত ছিল প্রশাসনকে অবগত করা। আগামীতে এ রকম কোনো
কিছু হলে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে বলে জানান তিনি।
এএমকে/এম. জামান