প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ০৩:০৩ এএম
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের
নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে একজন কর্মচারীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের
অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সফিকুল ইসলামের দফতর
থেকে কামরুল ইসলাম নামে ওই কর্মচারীকে উদ্ধার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। ঘটনাটি
ঘটেছে বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে।
নির্যাতনের শিকার কামরুল ইসলাম রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর। সে সম্প্রতি পাউবোর নীলফামারীর ডালিয়া প্রকল্প থেকে রাজশাহীতে বদলি হয়ে আসেন। কামরুল ইসলামের বাড়ি নাটোরে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে তিনি বাদী হয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম শেখ, সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিম ও ওবাইদুল হক এবং উপসহকারী প্রকৌশলী মুকেশ কুমারকে আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আটকে রেখে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ভুক্তভোগী কামরুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ আগে পাউবোর ডালিয়া প্রকল্প থেকে তিনি রাজশাহীতে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরে বদলি হয়ে আসেন। বদলি হয়ে আসার পর থেকে তাকে কোনো কাজ দেয়া হয় নি। ফলে শুধু বসে থেকেই তার দিন পার হচ্ছিল। ফলে মঙ্গলবার অফিস সময় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে অফিস ত্যাগ করেন। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
পর দিন বুধবার তিনি অফিসে গেলে দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী তাকে দফতরে ডেকে নেন। আগের দিন এক ঘণ্টা আগে অফিস ত্যাগের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় কামরুল ইসলাম বলেন, বদলি হয়ে আসার পর থেকে তাকে কোনো কাজ দেয়া হয়নি। কোনো কাজ না থাকায় তিনি এক ঘণ্টা আগে চলে যান। কামরুল ইসলাম তাকে কিছু কাজ দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেন। এতেই নির্বাহী প্রকৌশলী তার ওপর ক্ষেপে ওঠেন।
অভিযোগ মতে, এ সময় কামরুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলীর মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী অন্যান্য অধস্তনকে দ্রুত ডেকে নেন তার দফতরে। সবাই মিলে কামরুল ইসলামকে ধরে পিঠমোড়া করে বেঁধে ফেলেন। এর পর অফিসের ফ্লোরে ফেলে শুরু হয় নির্যাতন।
কামরুল ইসলামের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সহযোগীরা সমানে তাকে কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। অফিসেরই কোনো কর্মচারীর মাধ্যমে খবর পেয়ে স্ত্রী কুমকুম আরা রাতে নাটোর থেকে ছুটে যান রাজশাহীতে।
নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুনয়-বিনয় করেও স্বামীকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে রাত ১০টার দিকে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেন। বোয়ালিয়া থানার পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে কামরুল ইসলামকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
এদিকে বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া মডেল থানায় পুলিশি হেফাজতে থাকা কামরুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহীতে বদলি হয়ে আসার পর থেকেই নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার আস্থাভাজন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে নানাভাবে পীড়ন করে আসছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা তার রাজশাহীতে বদলির বিষয়টি ভালোভাবে নেন নি। তাকে কোনো কাজ দেয়া হয়নি। ফলে সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে গিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তিনি শুধু বসে থেকেই কাটিয়েছেন। তিনি অফিসের কাজ চেয়েছিলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সহযোগীদের নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী নিজ দফতরে আটকে রেখে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, কামরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ওসি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ করেছেন। যাতে তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর সপুরাস্থ পাউবোর কার্যালয়ে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তার মোবাইল ফোন নম্বরটিও এই সময়ে বন্ধ পাওয়া গেছে।
অফিসের কর্মচারীরা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবোর রেস্ট হাউসে আছেন। কখন অফিসে আসবেন তারা কিছুই জানেন না।
জেডআই/