প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ১২:১৩ এএম
লালমনিরহাটের
কালীগঞ্জ উপজেলায় নবনির্বাচিত ইউপি সদস্যের টর্চার
সেলে পেরেক ঢুকিয়ে এক যুবককে নির্যাতন
করা হতো। টানা ছয়
দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বুধবার ১২
জানুয়ারি আনোয়ারুল ইসলাম (৩০) নামে ওই
যুবক মারা যান। এর
প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) তার লাশ নিয়ে আদিতমারী উপজেলার
নামুড়ি বাজারে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয়রা।
মৃত
আনোয়ারুল আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।
পুলিশ
ও স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে পাশের কালীগঞ্জের
চলবলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের
ইউপি সদস্য প্রার্থী মোজাম্মেল হককে দেড় লাখ
টাকা ধার দেন আনোয়ারুল।
নির্বাচনে জয়লাভের পর সেই টাকা
পরিশোধ করতে চাপ দেন
তিনি। এ সময় টাকা
না দিয়ে তাকে ভয়ভীতি
দেখান মোজাম্মেল, যা নিয়ে উভয়ের
মধ্যে মনোমালিন্য হয়। গত ৪
জানুয়ারি টাকা দেয়ার কথা
বলে আনোয়ারুলকে
নিজ বাড়িতে ডেকে নেন মোজাম্মেল।
এরপর নিজের টর্চার সেলে আটকে রেখে
দুই দিন অমানসিক নির্যাতন
করেন। এ খবর জানতে পেরে
ইউপি সদস্যের বাড়িতে আনোয়ারুলকে উদ্ধার করতে গিয়ে ধরা
পড়েন তার প্রতিবেশী রোকনুজ্জামান।
তখন রোকনুজ্জামানের ওপরও অমানসিক নির্যাতন
করা হয়। পরে ৬
জানুয়ারি আনোয়ারুলের পরিবারের সদস্যরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন
করলে পুলিশ মোজাম্মেলের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়।
এ সময় আনোয়ারুলের মোটরসাইকেল
উদ্ধার করে তারা। অবস্থা
বেগতিক দেখে মুমূর্ষু আনোয়ারুল
ও রোকনুজ্জামানকে স্থানীয় তেঁতুলিয়া মাদরাসা মাঠে ফেলে সটকে
পড়ে অপহরণকারীরা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত আনোয়ারুলের
মাথাসহ সারা শরীরে অসংখ্য
লোহার পেরেক লাগানো ছিল। হাসপাতালে নিজের
ওপর হওয়া অমানসিক নির্যাতনের
বর্ণনা দেন আনোয়ারুল। এ
ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী
হয়ে ওইদিন রাতে ইউপি সদস্য
মোজাম্মেল, তার ছোট ভাই
মোশারাফ হোসেন ভুট্টু, ছেলে সুজনসহ পাঁচজনের
বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) আদালতে
আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন
করেন মোজাম্মেল ও তার ছোট
ভাই। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে
পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর আড়াইটায় আনোয়ারুলের লাশ নামুড়ি বাজারে
পৌঁছে। তখন হাজার হাজার
মানুষ লাশটি নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী
মহাসড়ক অবরোধ করে বিচার দাবিতে
বিক্ষোভ করে। এর ফলে
মহাসড়কের দুই পাশে শত
শত যানবাহন আটকা পড়ে। খবর
পেয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ পরিস্থিতি
স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে
ব্যর্থ হয়। বিকেলে এ
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়ক
অবরোধ ছিল।
আদিতমারী
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম
বলেন, ‘মহাসড়ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করা
হচ্ছে। ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠানো হয়েছে।’
জেডখান/এম. জামান