প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৬:১১ এএম
ফরিদপুরের সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন জামান রেমিন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এস এস সি তে তার গোল্ডেন এ প্লাস। রেমিনের স্বপ্ন ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করবে। দশের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের সেবা করবে। কিন্তু আনন্দ-খুশি উদযাপনে ফোটানো এক বাজির শব্দে ভয় পেয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করে সে। এরপর হয়ে যায় প্যারালাইজড। একটি বাজির শব্দ শুধু রেমিনের জীবনই তছনছই করেনি, তার পুরো একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের জুন মাসের ঘটনা। পবিত্র রমজানের ঈদের খুশিতে বাসার পাশে হঠাৎ করে
ফোটানো বাজির শব্দে ভয়ে কেঁপে উঠে রেমিন। সেই থেকে অসুস্থ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
হয়ে একপর্যায়ে প্যারালাইজড হয়ে যান। দীর্ঘদিন চিকিৎসায় সামান্য উন্নতি হলেও
রেমিনের ডান হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে পড়ে। এখনো হাঁটাচলা করতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর শহরের
পূর্ব খাবাসপুরের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী জাহিদ রিপনের একমাত্র মেয়ে রেমিন।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জাহিদ রিপন গণমাধ্যমে তার মেয়েকে নিয়ে দুঃখসহ অনুভূতি
প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছিল
দারুণ মেধাবী। ক্লাস ফাইভ আর এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসি পাস করেছিল
গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে। আমার সেই সোনার টুকরো মেয়েটা এখন অনেক আপনজনকেই চিনতে পারে
না। নিছক আনন্দের জন্য কিছু মানুষের ফোটানো বাজির শব্দে ভয় পেয়ে ব্রেইন স্ট্রোক
করে সে। এরপর হয়ে যায় প্যারালাইজড। এখন তার সারা দিনের সঙ্গী বিছানা।’ তিনি আক্ষেপ
করে বলেন, ‘একটি বাজির শব্দ
আমার পরিবারের জন্য এল সারা জীবনের কান্না হয়ে’, 'বাজির শব্দে তছনছ হয়ে গেছে আমার সোনার টুকরো
মেয়েটার জীবন।'
রেমিনের বাবা বলেন, 'বাজির ঘটনার পর
রেমিনের শরীরের একপাশ পুরো প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি
হয়েছে। তবে এখনো তার ডান হাত আর ডান পা প্যারালাইজড। ধরে ধরে হাঁটাচলা করাতে হয়।’
এক সময় চারপাশ মুখরিত করে রাখা রেমিন দুর্ঘটনার সাড়ে চার বছর পরও তেমন কথা
বলতে পারে না বলে জানান তিনি। জাহিদ রিপন বলেন, ‘এখনো সে মানুষ চেনে কম। আমরা যারা কাছে থাকি
তাদের ছাড়া অন্যদের চিনতে কষ্ট হয়। স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল, তেমন কিছুই মনে থাকে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো উচ্চ শব্দের
কোনো ধরনের আওয়াজ সে সহ্য করতে পারে না। এছাড়াও আমার আরেকটি ছেলে আছে সে নবম
শ্রেণিতে পড়ে। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শব্দ দূষণের কারণে শহর ছেড়ে গ্রামে বসবাস
করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
রেমিনের ঘটনায় চাচা সাংবাদিক সুমন ইসলাম বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত।
আমাদের পরিবার ও আমার ভাতিজির স্বপ্ন ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করার।
কর্মজীবনে বাবা ও চাচাদের মতো সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে জড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু তার
সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে একটি বাজির শব্দে।’
আরেক চাচা সাংবাদিক কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘এই ঘটনা না ঘটলে, রেমিন সুস্থ থাকলে এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী থাকতো। তার ও আমাদের পরিবারের সবার আশা-স্বপ্ন পূরণ হতো। অথচ এখন তার
সময় কাটে বিছানায় শুয়ে-বসে। তবে ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উল্লাসের অমানবিক
প্রক্রিয়া এখনো চলছে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখনো নিউ ইয়ার, ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে কারণে-অকারণে বাজি ফোটানো হচ্ছে। আতশবাজি, ফানুস আর শব্দ দূষণ করে মাঝরাতে উচ্চ ভলিউমে গান বাজানো- এসব ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আইন-কানুন বা নিয়ম-নীতি কিছুই নেই।’
অর্ণব