প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০৭:৪৭ পিএম
লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে দিনদিন হারিয়ে
যেতে বসেছে গ্রামবাংলার অতিপরিচিত বেতবন। এক সময় নাটোরের
বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় অনেক
বেতবন দেখা গেলেও
এখন তা চোখে পড়া
দুষ্কর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বেতের তৈরি আসবাপত্রও হারিয়ে
যেতে বসেছে।
এক
সময় নাটোরের বাগাতিপাড়া, লালুপর, নলডাঙ্গাসহ আমহাটি, তেবাড়িয়া এলাকায় বেশ কিছু বেতবন দেখা যেত। গ্রামের
কাঁচা সড়কের দুই পাশ জুড়ে
দেখা মিলত ক্ষুদ্র ও
বৃহৎ আকারের বেতবন। এখন
সেই সড়কের দুই পাড়ে চোখে
পড়ে বসতবাড়ি।
বিলুপ্তের
কারণ :
ভরাট
হচ্ছে জলাশয়, অবরুদ্ধ হচ্ছে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ।
বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে বন, কৃষিজমি
ও জলাশয়। প্রকৃতি হারাতে বসেছে ভারসাম্য। উজাড় হয়েছে বেতবন, ব্যবহার বন্ধ হয়েছে বেতের
তৈরি সকল পণ্য। যার
জন্য ধীরে ধীরে বেতবন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
জন্ম
ও আকার :
বেত
ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের
ভেজা ও জংলা নিচু
জমিতে ভালো জন্মে। বেতগাছ
জঙ্গলাকীর্ণ কাঁটাঝোপ আকারে দেখা যায়। চির সবুজ
এ উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫
ফুট এবং কখনও তার
চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে
থাকে। সাধারণত ছয় প্রজাতির বেত
পাওয়া যায়। এগুলোর কাণ্ড
দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময়, খুবই শক্ত
ও শাখাহীন।
তৈরি
আসবাবপত্র :
বেত
সংগ্রহের পর রোদে শুকিয়ে
তৈরি করা হয় হরেক
রকম আসবাবপত্র। যেমন- চেয়ার,
টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙারি, মুড়া, হাতপাখা, চালন, গোলা, ডোল, ধামা, পাতি,
বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা,
খাট, ঝুড়ি ইত্যাদি।
এসব জিনিস গৃহসজ্জার কাজেও
ব্যবহার করা হয়, বিশেষ
করে রেস্তোরাঁ ঘর বা অফিসের
শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার
হয়ে থাকে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে
নানা কিছু বাঁধার কাজেও
ব্যবহার করা হয়। ফলের
জন্য বেতের চাষ করা হয়
না। বেতের প্রধান ব্যবহার হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। তবে এর ফল
বেশ সুস্বাদু।
হস্তশিল্প
ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, এক
সময় বেতের তৈরি আসবাবপত্র বেশ
জনপ্রিয় ছিল। এখন আর
তেমন চোখে পড়ে না।
তবে পাহাড়ি এলাকায় গেলে চোখে পড়ে।
এখন সবাই কাঁসা, মেলামাইন ও স্টিলের জিনিস ব্যবহার করছেন।
হস্তশিল্প
ব্যবসায়ী সুকুমার রায় জানান, প্লাস্টিক
পণ্যের ভিড়ে হারিয়ে গেছে
হস্তশিল্পের অনেক পণ্য। আগে
প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ বাঁশ ও বেতের তৈরি অনেক কিছুই
ব্যবহার করতেন। এখন বিলাসিতা আর শৌখিনতায় ব্যবহার করেন।
নলডাঙ্গা
উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের হারান সরকার বলেন, ‘বেতের জালি ডগা দিয়ে
তরকারি খেতাম, বেতের ফল খেতাম, গ্রামের
অনেক মানুষ বেত দিয়ে বিভিন্ন
ধরনের নিত্য ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি ও
সরবরাহ করতেন, যা তাদের আয়ের
উৎস ছিল। এখন আর
বেতবন নেই।’
নাটোর
জেলা বন কর্মকর্তা সত্যেন্দ্রনাথ
জানান, সরকারিভাবে নাটোরে বেতবন করার
কোনো পরিকল্পনা নেই এবং জায়গাও
নেই। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন
জেলায় সরকারিভাবে বেতের আবাদ করা হয়।
নূর/এম. জামান