• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বছরজুড়েই টাঙ্গাইলে হত্যা-ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২, ০২:০৯ এএম

বছরজুড়েই টাঙ্গাইলে হত্যা-ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

বছরজুড়েই নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় থেকেছে টাঙ্গাইল। প্রেম ও পরকীয়ার কারণে হত্যা ও ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বছরের শেষ  দিকে অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর পরকীয়ার বলি হন ঘাটাইল উপজেলার কাশতলা গ্রামের গৃহবধূ সুমি বেগম (২৫), তার শাশুড়ি জমেলা বেগম (৬০)।

এ ঘটনায় আহত হয় ওই গৃহবধূর পাঁচ বছরের শিশুটিও। এ ঘটনায় সুমির পরকীয়া প্রেমিক পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের শাহজালালও (৩০) ঘটনাস্থলেই আত্মহত্যা করেন।

গত ২৫ মে সকালে রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার পাড়ার সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে গার্মেন্টস কর্মী আজহারুলের মরদেহের অর্ধগলিত ৬ টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান (৫৪) ও নিহতের স্ত্রী আছমা আক্তার (২৪)। গত ৫ মাস ধরেই আছমার সঙ্গে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল।

এর আগে, এ বছর রমজান মাসে ঈদের আগের দিন টাঙ্গাইলের কালিহাতী আজহারুলের গ্রামের বাড়ি চলে যান তারা। ছুটি শেষে গত ১৮ মে জোরপূর্বক আজহারুলকে ঢাকা পাঠায় তার স্ত্রী আছমা। পরদিন ১৯ মে ইমাম আজহারুলকে ফোন করে মসজিদে আসতে বলেন। ওইদিন কাজ শেষে গার্মেন্টস থেকে সরাসরি ইমামের সঙ্গে দেখা করতে মসজিদে যান আজহারুল। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমাম আব্দুর রহমান মসজিদে তার নিজ কক্ষে কোরবানির পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে আজহারুলকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আজহারুল মসজিদের সিঁড়িতে পড়ে গেলে তার গলার ডান দিকে ওই ছুরি দিয়ে একাধিক আঘাত করেন ইমাম। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে মরদেহ কক্ষের ভেতরে নিয়ে এসে ছুরি-চাপাতি দিয়ে ৬ খণ্ড করেন ঘাতক ইমাম। এরপর গুম করতে তার মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় এবং ট্যাংকের মুখটি সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখে।

এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আসামি দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান (৫৪) ও নিহতের স্ত্রী আছমা আক্তার হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

অপরদিকে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মনির হোসেন নামের এক ট্রাক চালকের সহকারী তার প্রাক্তন প্রেমিকা ছুমাইয়া আক্তারকে (১৬) বুধবার (২৭ অক্টোবর) ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আত্মহত্যার জন্য মনির নিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে করেন। পরে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় টাঙ্গাইল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১২-এর কোম্পানি কমান্ডার আবদুল্লা আল মামুন সিটি নিউজ ঢাকাকে জানান, মনিরের সঙ্গে ছুমাইয়ার দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। হত্যার দুই মাস আগে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ কারণে মনির ছুমাইয়ার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং ছুমাইয়াকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। মনিরের টিকটকের প্রতি আগ্রহ ছিল। ঘটনাস্থল উদ্ধার হওয়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি টিকটকে ব্যবহার করেছে। এছাড়া র‌্যাবের কাছে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে যা দেখে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মনির নিজেই জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৩৪ দিন আটকে রেখে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে গণর্ধষণের পর ভারতে পাচারের উদ্যোগ নেয় পাচারকারীরা। পরে বিষয়টি টের পেয়ে ওই কিশোরী কৌশলে পালিয়ে আসে নিজের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে।

এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে ১৭ অক্টোবর টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেন।

কিশোরী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাশের ঘাটাইল উপজেলার গৌরিশ্বর গ্রামের আসকরের ছেলে আল আমিনের (২৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই স্কুলছাত্রীর। চলতি বছরের ২১ জুলাই ঈদুল আজহার দিন বিকেলে ওই কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি ভূঞাপুরের পৌর এলাকার তেঘরী গ্রামে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে আল আমিনের ফোন পেয়ে ওই ছাত্রী নানার বাড়ি থেকে তার সঙ্গে ঘাটাইল উপজেলার চেংটা গ্রামে যায়। 

আল আমিন কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একটি বাড়িতে রেখে একটানা ২৫ দিন ধর্ষণ করেন। পরে ১৫ আগস্ট তিনি তার আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে আসে। বাসস্ট্যান্ডে আল আমিনের বন্ধু পাচারকারী চক্রের সদস্য ট্রাকচালক মাসুদের ট্রাকে উঠে তাদের গন্তব্যে রওনা হয়। 

১৬ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে একটি ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় ওই স্কুলছাত্রীকে। সেখানে চার-পাঁচজন মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করে। পরে তাদের আলাপচারিতায় কিশোরী বুঝতে পারে যে, তাকে ভারতে পাচার করার পরিকল্পনা করছে। তিনি বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ২৫ আগস্ট রাত ৮টার দিকে সেখান থেকে পালিয়ে রিকশায় বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড আসে। সেখান থেকে ২৬ আগস্ট বাড়িতে চলে আসেন।

আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোতে প্রবাসীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় প্রথম সাক্ষাতেই ধর্ষণের শিকার হন প্রেমিকা। এ ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক প্রবাসী আব্দুর রহমানকে (৩৩) আসামি করে ঘাটাইল থানায় ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার সিটি নিউজ ঢাকাকে জানান, অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সিটি নিউজ ঢাকাকে জানান, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সামাজিক অবক্ষয় থেকে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে পুলিশের পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতন হতে হবে। তাহলেই এ ধরনের ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার  জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ‘পারিবারিকভাবে সন্তানদেরকে কঠোর নজরদারির মাঝে রাখতে হবে। তাদের সচেতন করতে হবে, যারা এ ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে অনেকটা কমে আসবে।

জেডআই/ডা

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ