প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২, ০১:০৬ এএম
তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
বছরজুড়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় সারা দেশে আলোচনায় ছিল কক্সবাজার। বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ভাসানচরে
রোহিঙ্গা স্থানান্তর হওয়া, রোহিঙ্গা
নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড, রোহিঙ্গা
ক্যাম্পে একটি মাদরাসায় এক দিনে ৭ রোহিঙ্গাকে হত্যা, জেলা শ্রমিক
লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার হত্যা, হাতি হত্যা, সৈকতে তিমি ভেসে আসা ও সর্বশেষ সৈকতে এক
নারীকে ধর্ষণ। বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ছিল বছরজুড়ে কক্সবাজারসহ
সারা দেশের আলোচিত বিষয়। এসব ইস্যু নিয়ে
প্রশাসনকে বছরজুড়েই তৎপর থাকতে হয়েছে।
বর্তমানে মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মিয়ানমার যাতে তাদের ফিরিয়ে নেয় সেজন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
চলতি বছর ২৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। এটা যে বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যা সেটা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য তিনি প্রত্যাবাসনে বিশ্বনেতাদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
১) ভাসানচরে জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়া : রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সরকারের নির্মিত ভাসানচর প্রকল্পে জাতিসংঘের সম্পৃক্ত হওয়া ছিল ২০২১ সালের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশকে।
নানা ঘটনা পরিক্রমায় অবশেষে গত ১৮ অক্টোবর ভাসানচরের শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে জাতিসংঘ। সমঝোতা অনুযায়ী সেখানে মানবিক কার্যক্রমের সমন্বয় করবে জাতিসংঘ।
সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে জাতিসংঘ। এটি যেহেতু বড় বাজেটের ব্যাপার সেজন্য লোকাল এনজিওগুলোই চাইছিল জাতিসংঘ সম্পৃক্ত হোক।
২) রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড : চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। প্রশাসন তৎপর হয়ে সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে। এখন মামলটি বিচারাধীন।
৩) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ হত্যা : গত ২২ অক্টোবর উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-১৮এর এইচ-৫২ ব্লকের একটি মাদরাসায় ঢুকে ৭ জনকে হত্যা করেছে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই সময় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গা।
৪) জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার হত্যা : গত ৮ নভেম্বর রাতে শ্রমিক লীগ সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার ও তার ভাই কুদরত উল্লাহর অফিসে ঢুকে একদল সন্ত্রাসী তাদের গুলি করে ও কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে জহির মারা যান। এ ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনও মামলার মূল আসামিরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
৫) হাতি হত্যা : বৈদ্যুতিক শক, ফাঁদ ও দুর্ঘটনায় চলতি বছর জেলায় ছোট-বড় অন্তত ৯টি হাতি মারা গেছে।
৬) সৈকতে ভেসে আসা তিমি : চলতি বছরের ৮ ও ৯ এপ্রিল হিমছড়ি দরিয়ানগরের সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে দুটি মৃত তিমি। তিমি দুটির ওজন দুই থেকে আড়াই টন। পরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তিমি দুটি বালিচাপা দিয়ে হাড়গুলো সংরক্ষণ করেছেন।
৭) সৈকতে নারী পর্যটক ধর্ষণ : বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা এক নারী ধর্ষণকে কেন্দ্র করে এখনও আলোচনায় রয়েছে কক্সবাজার। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, কয়েকটি ঘটনায় পুরো বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কক্সবাজার। এসব ঘটনার কিছু অংশ এখনও চলমান রয়েছে। নতুন বছরে আমাদের সকলের প্রত্যায় হোক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
জেডআই/এম. জামান