প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২, ১২:৪৭ এএম
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে মানুষের জীবন।
দৈনন্দিন জীবনে নানান ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কাঙ্ক্ষিত একটি বছর।
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের
প্রবাহমান সব ঘটনাগুলো স্মৃতির পাতায় জমা না হলেও কিছু কিছু ঘটনা মনে দাগ কাটে।
আলোচিত সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ আবার স্বপ্ন দেখে, নতুন
করে বাঁচতে শেখে।
এমনি হাজারো ঘটনার ভিড়ে কুড়িগ্রামে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বাল্যবিয়ে। আলোচনায় আসে কুড়িগ্রামের সারডোব উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিরোনাম হয় "নার্গিসবাদে ঝরল সব ফুল"
করোনায় আতঙ্ক দূরে ঠেলে দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে খুশি নার্গিস। অত্যন্ত আনন্দ উদ্দীপনা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন নার্গিস। দীর্ঘদিন পর বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হবে। গল্প হবে সেই উচ্ছ্বাস ছিল তার চোখে-মুখে। বন্ধুরা পর্যায়ক্রমে শ্রেণিকক্ষে আসলেও মেয়ে বান্ধবী কেউ আসল না। পরে নার্গিস জানতে পারে শুধু নার্গিস বাদে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া সব মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এরকম আশাহত হয়ে উদ্বিগ্নতায় দিন কাটে হাজারো নার্গিসের। পুতুল খেলার বয়সে বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যানুযায়ী-২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত জেলায় ২১ হাজার ১০০টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা-১৭ হাজার ৯৮৪টি এবং অনিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা-৩ হাজার ১১১টি। জেলার ৯টি উপজেলায় বাল্যবিয়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৫৩টি। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ হয়েছে ১ হাজার ১২০টি। এরই মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর-৭০২টি, রাজারহাট-৭৩টি, উলিপুর-২৫৯টি, চিলমারী-১৪০টি, রৌমারী-৮৪টি, রাজিবপুর-৪৯টি, নাগেশ্বরী-১১২৮টি, ফুলবাড়ি-২৯১টি, ভূরুঙ্গামারীতে-২২৭টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। যদিও করোনার লকডাউন চলাকালীন সময় জরিপের কার্যক্রম কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে জেলার বাল্যবিয়ের হার বাস্তবতার আলোকে আরও অনেক বেশি। এ বছরের অর্ধেক সময়জুড়ে ছিল করোনার প্রকোপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, অর্থনৈতিক মন্দা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর মনিটরিংয়ের অভাবে দারিদ্র্যময় জেলা কুড়িগ্রামে বেড়েই চলেছে বাল্যবিয়ের ঘটনা।
কোলের দুই সন্তানকে বিক্রি করেও চলছে না মর্জিনার সংসার
কুড়িগ্রাম জেলা দারিদ্র্যময় জেলা। শিক্ষা সংস্কৃতি থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও জেলার মানুষের এখনও দুর্ভোগ কাটেনি। এখনও পেটের দায়ে নিজের সন্তানকে বিক্রি করার মতো ঘটনা ঘটছে। ২০২১ সালে বেশ আলোচনায় আসে তা হলো কোলের দুই সন্তানকে বিক্রি করেও চলছে না মর্জিনার সংসার। উলিপুর উপজেলার বুড়া-বুড়ি ইউনিয়নে শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা মর্জিনা। নিজের বাড়ি ঘর না থাকায় ওঠেন সরকারি অর্থায়নে করা গুচ্ছ গ্রামে। ছয় সন্তানের জন্ম দেয়া ওই দম্পতি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। উপার্জনের কোনো উৎস না থাকায় ও সরকারি কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় জীবন বাঁচার তাগিদে সন্তান বিক্রি করার পথ বেঁচে নেন। এ খবর প্রচারের পর উলিপুর উপজেলা প্রশাসন মর্জিনা দম্পতিকে আর্থিক সহযোগিতাি ও সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেন। ওনারা এখন ভালোই আছেন।
ব্রিজ থেকে কোলের শিশুকে পানিতে ফেলে দিলেন মা
অভাবের তাড়নায় কোলের সন্তানকে পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়। জমিলা যদিও ভুলটি স্বীকার করেছে কিন্তু সেও তো এ কাজটি করতে চায়নি। অভাবের কারণে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন। ঘটনাটি লাখো মানুষের মনে দাগ কাটে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবারটিকে সহযোগিত করেন। সিটি নিউজ ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আতিক কুড়িগ্রাম প্রতিনিধির মাধ্যমে ওই পরিবারটিকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি খোঁজখবর নেন।
জেডআই/ডা