প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২১, ১০:১০ পিএম
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে পরপর দুটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে
রেখে পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে আমিনুর রহমান নামের এক মাদরাসা শিক্ষকের
বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়,
প্রথম সন্তানকে হত্যার চেষ্টা, দ্বিতীয় সন্তান গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে অত্যাচারসহ যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের
অভিযোগ রয়েছে আমিনুর ও তার পরিবারের
বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী
নারী ৯ জনকে আসামি
করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা
সূত্রে জানা যায়, ২০১৮
সালের ১৩ এপ্রিল আদিতমারী
উপজেলাধীন কাচারীপাড়ার মৃত আব্দুল বাতেনের
মেয়ে লায়লা বিলকিছ বানুর সঙ্গে একই উপজেলার মহিষখোঁচা
বারঘড়িয়া গ্রামে আমজাদ হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমানের
বিয়ে হয়। লায়লা একটি
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল
মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায়
তাদের কোলজুড়ে আসে প্রথম কন্যা
সাদিয়া।
লায়লার
অভিযোগ- ‘কন্যাসন্তান হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় তার স্বামী।
তাকে নির্যাতনের পাশাপাশি অবুঝ সন্তানটির ওপরেও
চালান হত্যার চেষ্টা। এরপর তড়িঘড়ি করে
দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণে বাধ্য করান। আট মাস পরে
পেটে আসে দ্বিতীয় সন্তান। আল্ট্রাসনো রিপোর্টে জানতে পারেন গর্ভের সন্তানটিও কন্যা। শুরু হয় অমানবিক
নির্যাতন। গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে পেটে লাথি মারলে
গুরুতর অসুস্থ হন তিনি।’
লায়লা
আরও জানান, পেটে আঘাতপ্রাপ্ত
হওয়ায় গর্ভের পানি শুকিয়ে যায়।
ফলে নির্ধারিত সময়ের ২২ দিন আগে
দ্বিতীয় কন্যাসন্তানটির জন্ম হয়। এরপর
থেকেই স্বামী লাপাত্তা।
বিয়ের
পর থেকেই ও তার পরিবার
যৌতুকের জন্য নানাভাবে লায়লাকে
নির্যাতন করে আসছিলেন। প্রথম
থেকে ছেলেপক্ষের চাহিদা
মতো যৌতুক দিলেও তাতে তারা সন্তুষ্ট
হতে পারেননি। এখন নগদ ১৫
লাখ টাকা, জমি কিনে ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে নিজ নামে
দলিল করে দিতে বলেন। আর
এসবের ইন্ধন জোগাচ্ছেন তারই বড় ভাই
শহিদুল ইসলাম- এমন দাবি লায়লার
মায়ের।
এ
ব্যাপারে অভিযুক্ত রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার
কর্মস্থল ও বাড়িতে গেলেও
তাকে পাওয়া যায়নি। আর বিষয়টি নিয়ে
মুখ খুলতে নারাজ পরিবারের অন্যরাও।
মামলার
২নং আসামি অমিনুর রহমানের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম জানান- দায়েরকৃত মামলায় তারা সবাই জামিনে
আছেন। আইনি জটিলতা এড়াতে
এরই মধ্যে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহরের টাকা
জমা দিয়ে লায়লাকে তালাক
দেয়া হয়েছে।
এ
ধরনের ঘটনাকে মানসিক দৈন্য আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা
ও কঠোর বিচার দাবি
করেছেন জেলা নারী নির্যাতন
প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম বিউটি। তিনি
জানান, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করতে যেখানে সরকার
বদ্ধপরিকর; সেখানে কুসংস্কারাচ্ছন্ন একজন যৌতুকলোভী স্বামীর
এমন মানসিকতা সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব
ফেলতে পারে। দ্রুত অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ঘটনার
সত্যতা নিশ্চিত করে আদিতমারী থানার
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম
বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল
করা হবে।’
নূর/এম. জামান