প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২১, ০১:২৯ এএম
কয়েকদিন
ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ভোর থেকে বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। বেলা গড়ানোর
সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা বাড়লেও আবার বিকেল হতেই কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। রাতের বেলায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে আরও। এতে বিপাকে পড়েছে পুরো জেলার মানুষ। বিশেষ করে পদ্মা নদী
ঘেঁষা শিবচর চরাঞ্চলের চরজানাজাত বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ী, সন্নাসীরচর ইউনিয়নগুলোর অবস্থা
করুণ। এসব এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়- শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছেন দুঃস্থ, অসহায় ও নিম্ন
আয়ের মানুষ।
এদিকে
রাতে কিংবা সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোর থেকে
সকাল ১১টা পর্যন্ত দেখা যায় কুয়াশায় মোড়ানো এলাকা। আর কুয়াশার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষেরা। এসব এলাকার অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আয় না থাকার
কারণে পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তাদের। ফলে অর্থাভাবে
দরিদ্র মানুষদের পক্ষে শীতের কাপড় সংগ্রহ করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে
কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বিভিন্ন বাজারে ধুম পড়েছে লেপ-তোশক
তৈরির। তবে নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য না থাকায় হতদরিদ্ররা ফুটপাতের দোকানগুলোতে পুরাতন
শীতের কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন।
শিবচরের
বাঁশকান্দি এলাকার বৃদ্ধা মোতালেব শিকদার বলেন, ‘৭৬ বছর বয়স আমার। কুয়াশার সঙ্গে এত
শীত আগে কোনোদিন দেখিনি। যেমুন শীত তেমন ঠাণ্ডা। এতদিন জানতাম কুয়াশা বেশি পড়লে শীত
কম হয়, কিন্তু এখন হচ্ছে তার উল্টোটা।‘
শিবচর
চরজানাজাত এলাকার ফয়জল মোল্লার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষজন
নিম্ন আয়ের। তাদের এই শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাদের এলাকার অনেকেই চরম মানবেতর জীবনযাপন
করছে।’
চরজানাজাত
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রায়হান সরকার জানান, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ
নদী ভাঙন ও বন্যাকবলিত অসহায়-দরিদ্র। ইউনিয়নের মধ্যে পদ্মা নদী ভেঙে অবশিষ্ট আছে ১টি
ওয়ার্ড। আবার পদ্মার মাঝে চরে শতাধিক পরিবার বসবাস করতেছে। তীব্র শীতে লোকজন খুবই কষ্টের
মাঝে বসবাস করছে। সরকারিভাবে ৪৫০টি কম্বল পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।
মাদারীপুর
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অভজারভার আব্দুর রহমান সান্টু বলেন, ‘শুক্রবার
(২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত মাদারীপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন
তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ সপ্তাহে সর্বনিন্ম ১০.৮
(২১ ডিসেম্বর) ও সর্বোচ্চ ২৫.৭ (১৮ ডিসেম্বর) আর কুয়াশার পরিমাণ অন্য দিনের চেয়ে বেশি
পড়েছে। এ ছাড়া গত ১ সপ্তাহে বাতাসের আদ্রতা শতভাগ রেকর্ড করা হয়।’
গেল
এক সপ্তাহের মধ্যে দৃষ্টিসীমা সবচে কম রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার দৃষ্টিসীমা ছিল ৫০০
মিটার।’
শিবচর
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, শীতার্ত মানুষের জন্য ৯ হাজার
শীতবস্ত্র পেয়েছি। এগুলো বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।’
মাদারীপুর
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাদারীপুরে শীতের তীব্রতা আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন
কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছর সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন
ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ায়। এবারও সবাইকে
শীতার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।’
এএমকে/ডা