• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাগেরহাটে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল

প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২১, ১০:৪৪ পিএম

বাগেরহাটে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল

বাগেরহাট প্রতিনিধি

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে জেলার আকাশ। 

সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। জেলা প্রশাসন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার বাসিন্দারের মধ্যে এখন পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও জোয়ারে নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। 

সকাল থেকে শরণখোলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সব নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে এক থেকে দেড় ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাসহ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। তবে এ উপজেলার পানগুছি নদীর তীরে থাকা শানকিভাঙ্গা ও বদনীভাঙ্গা গ্রামের বেড়িবাঁধ না থাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয় মানুষের মধ্যে। যে কারণে ঝড়ের প্রভাব শুরুর আগে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ বলেন, ‘পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উপকূলীয় এলাকায় নদী-খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাটিতে এ পানি আবার নেমে যাবে। মোরেলগঞ্জের কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ভেড়িবাঁধ নেই। সেসব গ্রামের বাসিন্দারা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে নিরাপদে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।’ 

এ দিকে আগের দিন থেকে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে ওঠায় এবং ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়াতে সুন্দরবনের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারসহ কোস্টগার্ডের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন করে সিগনাল না বাড়ায় এবং আবহওয়া বেশি খারাপ না হওয়াতে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত ১১টি বিদেশী জাহাজের পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনের কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। 

বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরউদ্দীন বলেন, ‘সিগনাল ৪ নম্বর না হওয়া পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে। ৪ নম্বর সিগনাল জারি কিংবা ক্রস করলেই সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।’

ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে এক থেকে দেড় ফুট পানি উঠেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষতির কবল থেকে রক্ষায় সুন্দরবনের গহিন বনের ৮টি টহল ফাঁড়ি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওইসব বন কার্যালয়ে কর্মরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। 

এ দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খন্দকার রিজাউল করিম। ইতোমধ্যে জেলায় ৩৪৪ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রসহ ২৮৫টি স্কুল কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ঘূর্ণিঝড়ের সময় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় তিন লাখ লোক থাকাসহ গবাদি পশুও রাখা যাবে। 

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়েছে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ পর্যাপ্ত পানি। এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, নৌবাহিনী কোস্টগার্ডসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, সব মিলিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। 

এ ছাড়া নগদ টাকাসহ ২৮ টন খাদ্যশস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় শিশুখাদ্য ও পশুখাদ্য কেনার জন্য আলাদাভাবে পাঠানো হয়েছে এক লাখ করে টাকা।

ডব্লিউএস/এম. জামান
আর্কাইভ