
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৫:৫২ পিএম
লিটন হোসেন লিমন, নাটোর প্রতিনিধি
নাম রজব বেপারি
লালন। বয়স ৪৩ বছর।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে চা ও পান
বিক্রি করেন। তার দোকানে এক
কাপ চা এক টাকা
ও মসলাযুক্ত একটি খিলি পান
বিক্রি হয় এক টাকায়।
এখন নওপাড়া মোড়টি সবার কাছে ‘এক
টাকার মোড়’ নামেই পরিচিত।
সরেজমিন দেখা যায়, এক টাকার
মোড়ে লালনের দোকানে ক্রেতাদের চা ও পান
খেতে। কথা হয় তাদের
সঙ্গে। তারা বলেন, ‘শুধু
তারাই লালনের দোকানে চা পান খেতে
আসেন না। অনেক দূর
থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চা-পান খেতে
ভিড় জমায়। অনেকে কৌতূহলে এক টাকায় চা
ও পান খেতে খেতে
লালনের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে
ওঠেন।’
এই মোড়ে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে লালন এক টাকায় চা ও এক টাকায় পান বিক্রি করছেন। নামমাত্র এক টাকায় চা-পান বিক্রি করায় নাটোরসহ সারা দেশে আলোচিত হয়েছেন তিনি।
ঊর্ধ্বগতির
এই বাজারে যেখানে সবাই পাঁচ টাকায়
চা ও পাঁচ টাকায়
পান বিক্রি করেন। সেখানে নামমাত্র এক টাকায় এক
কাপ চা ও একটি
পান বিক্রি করেন তিনি।
ভালোবেসে
মানুষকে প্রতিদিন চা ও পান
খাওয়ানো তার তৃপ্তি। যত দিন
বাঁচবেন তত দিন সবাইকে
এভাবে এক টাকায় চা
ও পান খাওয়াবেন বলে
জানান তিনি।
জানা যায়, ১৯৯১ সালে ৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ৫০ পয়সায় চা ও পান বিক্রি। এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে এক টাকায় চা ও পান বিক্রি শুরু করেন লালন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ১৪০০-১৫০০ কাপ চা এবং ১২০০-১৩০০টি খিলি পান বিক্রি করে থাকেন। ২০১৪ সালে লালন একই গ্রামের সুবর্ণা আক্তার শিমা নামে এক মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বতর্মানে তাদের সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
রহিম
শেখ নামে এক ক্রেতা
বলেন, ‘আমার বাড়ি কলাবাড়ি
গ্রামে। আমি দীর্ঘ ১০
বছর ধরে এই 'এক
টাকার মোড়ে' লালন ভাইয়ের দোকানে
চা-পান খেতে আসি।
শুধু আমি না, প্রতিদিন
শত শত মানুষ তার
এই দোকানে আসে।’
আফজাল
হোসেন নামে আরেক ক্রেতা
বলেন, ‘বর্তমানে এক টাকা ফকিরও
ভিক্ষা নেয় না। কিন্তু
লালন ভাই এক টাকায়
চা ও পান বিক্রি
করেন।’
চা
বিক্রেতা রজব বেপারি লালন
বলেন, ‘শুধু টাকা রোজগার করাই
আমার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। আমি মানুষের
খেদমতের উদ্দেশ্যে এক টাকা করে
চা ও পান বিক্রি
করি। কখনও লাভ-লোকসান
হিসাব করি না। আমার
দোকানে শুধু দেশের মানুষ
নয়, বিভিন্ন দেশের মানুষও আসে। আমি যত দিন
বাঁচব তত দিন এক
টাকায় চা ও পান
বিক্রি করে যাবো।’
নূর/এম. জামান