প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২১, ১০:২২ পিএম
শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন আবেদনের প্রেক্ষিতে লটারি উত্তীর্ণদের
সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির কথা থাকলেও তা মানছে না কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন
দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে নোয়াখালীতে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- নোয়াখালী
জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে লটারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও
বাচ্চাদের ভর্তি করাতে না পেরে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকগণ।
বুধবার (২২
ডিসেম্বর) দুপুরে ‘সরকারি স্কুলে লটারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ভর্তি নয় কেন? আমাদের
বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করুন’ এ স্লোগানে অভিভাবকবৃন্দের ব্যানারে
নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধন থেকে
অভিভাবকগণ অভিযোগ করেন, গত নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের
দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত ২৫ নভেম্বর সকাল ১১টা থেকে শুধু অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় শেষ হয় আবেদন প্রক্রিয়া।
প্রতি আবেদনকারী একই বিভাগের পছন্দ ক্রমনুসারে সর্বাধিক ৫টি বিদ্যালয় নির্বাচন
করে। আবেদন-পরবর্তী গত ১৫ ডিসেম্বর বিদ্যালয়সমূহে লটারি প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
তারা অভিযোগ করে
বলেন, প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি ১০ বছরের নিচে কোনো
শিক্ষার্থী আবেদন বা ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তু লটারি শেষ হওয়ার পর এখন ভর্তির
সময় শিক্ষার্থীদের বয়স কম, জন্মনিবন্ধন ও আবেদনে গ্রাম/ওয়ার্ডের
তথ্য ভুল দেখিয়ে ভর্তি নিচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবক নজরুল
ইসলাম চৌধুরী উজ্জল বলেন, ‘আমার মেয়ে জান্নাত নূর সদর উপজেলার
করুমুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণি পাসের পর অনলাইনে ভর্তির জন্য
নোয়াখালী সরকারি গার্লস স্কুলে আবেদন করে। আবেদনে বি ইউনিটে ১৭ নম্বর সিরিয়ালে
উত্তীর্ণ হয় সে। বিদ্যালয় থেকে ট্রান্সফার (টিসি) নিয়ে গার্লস স্কুলে ভর্তি হওয়ার
জন্য গেলে তার জন্মনিবন্ধনে তার বয়স ১০ বছর হতে ৫ দিন বাকি আছে কারণ দেখিয়ে ভর্তি
নেয়নি। আগের বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে আসার পর আবার যেখানে উত্তীর্ণ হয়েছে সেখানে
ভর্তি হতে না পারলে তার মেয়ের শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর পিছিয়ে যাবে। তাই তিনি
বিষয়টি বিবেচনা করে মেয়ের ভর্তির জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে
অনুরোধ করেছেন।
অভিভাবক সারমিন
সুলতানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বয়স এবং ওয়ার্ডের
বিষয়টি উল্লেখ না করে এখন ভর্তির সময় এসব কারণ দেখিয়ে শিশুদের ভর্তি না নেয়ার
বিষয়টি দুঃখজনক। বয়সসীমা নির্ধারণ না করে কেন সরকারিভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া
হয়েছে? কেনই বা ওই সব শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের
অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার
মেয়ে সৈয়দা আফরা ইয়াছমিনের জন্মনিবন্ধনে চৌমুহনী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড দেয়া আছে।
কিন্তু আবেদন করার সময় ভুলবশত তা ৪নং ওয়ার্ড উল্লেখ করায় তাকে এখন ভর্তি নেয়া
হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থী মো.
ওয়াছিয়ান বলেন, ‘ভর্তি লটারিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর
জন্মনিবন্ধনে মাত্র কয়েকদিন বয়স কম থাকায় আমাকে ভর্তি নিচ্ছে না। এখানে আমার অপরাধ
কোথায়, কেন আমাকে ভর্তি করানো হবে না?
মরিয়ম আক্তার
মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভর্তি লটারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমি
আমার বিদ্যালয় ও সহপাঠীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার জন্মনিবন্ধনে
মাত্র ৭ মাস বয়স কম হওয়ায় গার্লস স্কুলে আমাকে এখন ভর্তি নিচ্ছে না। ভর্তি হতে না
পেরে নিজের সহপাঠী ও এলাকাবাসীর কাছে এখন আমি এবং আমার পরিবার লজ্জায় পড়ে গেছি।
শিক্ষা জীবনের শুরুতে এমন একটি ধাক্কা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ধাক্কা।’
এ বিষয়ে জানতে
চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘সরকারিভাবে
ভর্তিচ্ছুকদের বয়স নির্ধারণ করা আছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম
শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের বয়স ৬ বছর হতে হবে। সে হিসেবে ২য় হতে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স
নির্ধারণ হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। ভর্তির
সংক্রান্ত সকল বিষয় বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে।
এস/ডা