• ঢাকা শনিবার
    ০৯ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

পদ্মাপাড়ে প্রতিদিন সাত লাখ টাকার টমেটো কেনাবেচা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২১, ০৮:১৭ পিএম

পদ্মাপাড়ে প্রতিদিন সাত লাখ টাকার টমেটো কেনাবেচা

জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী ব্যুরো

আষাঢ় মাস শেষে পদ্মার বুকে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। শহর থেকে ওপারে চর আষাঢ়িয়াদহ গ্রাম। কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই আয়রোজগারের। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন মাঠে। লাঙ্গল আর কোদালের আঘাতে মৃত্তিকার বুক চিরে বপন করেন বীজ। দিনের পর দিন যত্ন করে ফলান বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। এই ছোট গ্রাম থেকে রবি মৌসুমে প্রতিদিন টমেটো বিক্রি হয় প্রায় থেকে লাখ টাকার। পদ্মা পার হয়ে এসব টমেটো চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রামের চিত্র এটি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকাতেই হয়েছে টমেটোর চাষ। পদ্মাপাড়ে দেখা গেছে সারি সারি ট্রলার। তাতে কর্মব্যস্ত শ্রমিকেরা। ট্রলি থেকে মাথায় করে নামাচ্ছেন টমেটোর বস্তা। নিয়ে গিয়ে ফেলছেন নৌকায়। ঘাটে থাকা সারি সারি নৌকায় একে একে ভর্তি হচ্ছে টমেটোর বস্তা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে টমেটোর বেচাকেনা। কারোরই যেন সময় নেই কথা বলার।

এক ফাঁকে কথা হয় চর আষাড়িয়াদহ পদ্মাপাড়ের নৌকার সিরিয়াল মাস্টার আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টমেটোর বস্তা যায় রাজশাহী শহরে। নদীর ওপারে গেলেই টমেটোর বস্তা উঠে যাবে ট্রাকে। সেগুলো চলে যাবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন এই ছোট্ট ইউনিয়ন থেকে সবজির ব্যাপারিরা থেকে লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেন। টমেটোর সঙ্গে যায় অন্যান্য ফসলও।

পদ্মার চরাঞ্চল থেকে টমেটো সংগ্রহ করছিলেন ব্যাপারি সোহরাব আলী। রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাকসবজি কিনে সরবরাহ করেন তিনি। প্রায় ২০ বছর ধরে করছেন এই ব্যবসা। তিনি বলেন, ‘চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষেত থেকে টমেটো সংগ্রহ করে তা ট্রলিতে নেয়া হয়। বস্তাপ্রতি ২০ টাকা করে সেগুলো আনা হয় পদ্মাপাড়ে। এরপর নৌকায় তোলা হয়। আবার বস্তাপ্রতি নৌকার ভাড়া গুনতে হয় ১৫ টাকা করে। প্রতি বস্তায় প্রায় মণ করে টমেটো ধরে। আজও হাজারখানেক বস্তা মাল নিয়ে যাচ্ছি।

আষাড়িয়াদহ গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন। এবার বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গাছের চারা, সার, কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফসল হবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন। লাভের আশা করছেন প্রায় লাখখানেক।

একই গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আড়াই বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। এবার অন্যান্য মৌসুমের চাইতে ফলনও বেশ ভালো। তবে উঁচু অঞ্চলের থেকে আমাদের পদ্মাপাড়ের টমেটোর দাম কম। পরিবহন খরচের কারণে ব্যাপারিরা দাম কম দেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, চর নওশেরা দিয়ারমানিক চর  তিনটি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে চর আষাড়িয়াদহ ব্লকে সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয়। এই ব্লকে ৬০০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। হেক্টরপ্রতি আবাদ হয় প্রায় ২৫ মেট্রিক টন। সেক্ষেত্রে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন টমেটোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও কিছু চরাঞ্চল এলাকায় আবাদ হওয়ায় ফলন গত বছরের চাইতে বেশি হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মাটি উর্বর হওয়ায় টমেটো চাষে এখানে বেশি সারের প্রয়োজন হয় না।

তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে আগাম টমেটো ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন পর চার দিকে টমেটো উঠে গেলে দাম কমে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা দরেও মিলবে টমেটো।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর আবাদ ফলন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে চর আষাড়িয়াদহে সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়। কারণ বন্যা-পরবর্তী সময়ে অঞ্চলের জমিতে পলি পড়ে। পলি পড়ার কারণে মাটি উর্বর হয়। এছাড়া পানির সহজলভ্যতাও রয়েছে। এ কারণে উঁচু জমির চাইতে তুলনামূলক সার কম লাগে। তাই খরচও কম।

তাছাড়া রবি মৌসুমে টমেটো ছাড়াও আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোল, শিম, করলা মটরশুঁটির চাষ খুব ভালো হয়। তবে লাভ বেশি হওয়ায় টমেটো চাষে বেশি আগ্রহী অঞ্চলের কৃষকেরা।

নূর/এম. জামান

আর্কাইভ