প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২১, ১০:৪৫ পিএম
বাগেরহাট সদর
হাসপাতাল করোনা টিকাদান কেন্দ্রে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অব্যবস্থাপনার
কারণে টিকা না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে গ্রহীতাদের। একদিকে বিশৃঙ্খল সারিতে শত শত
শিক্ষার্থীর জটলা। অপরদিকে প্রচণ্ড চাপে প্রায় দমবন্ধ অবস্থা। এমন
পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন অনেকে।
মঙ্গলবার (২১
ডিসেম্বর) সকালে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে
এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক রেডক্রিসেন্টের একাধিক কর্মী জানান, শিক্ষার্থীদের
নিয়ে আসা অভিভাবক ও শিক্ষক পরিচয় দেয়া অনেকেই তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।
বিভিন্ন সময়ে তাদের গালাগাল এমনকি মারতে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘঠেছে। এছাড়া টিকাদান
কেন্দ্রে বাড়তি সুবিধা না দেয়াতেই কোনো কোনো প্রভাবশালীও তাদের গালাগাল করে,
হুমকি
দেয়। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা কেন্দ্রের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিজেদের
প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই পরিস্থিতে ভিড়ের কারণে বেলা ১২টার দিকে কিছু সময় বন্ধ
ছিল টিকাদান।
শিক্ষার্থী
ছাড়াও সদর উপজেলার সাধারণ নিবন্ধনকৃতরা করোনার টিকা নিতে আসেন সদর হাসপাতাল
কেন্দ্রে। এমন হুড়োহুড়ি আর বিশৃঙ্খল পরিবেশে টিকা পাননি তারাও। এমনকি নির্ধারিত
তারিখে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা অনেককেও ফিরতে হয়েছে টিকা না পেয়ে।
দুই মেয়েকে টিকা
দিতে নিয়ে আসা শহরের সরুই এলাকার বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন,
এটা
অব্যবস্থাপনা ও কাণ্ডজ্ঞানহীনতার চরম দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছু না। এখানে কোনো
কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হচ্ছে না। টিকাদান কেন্দ্র যেন মাছের বাজারে রূপান্তরিত
হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
একাধিক অভিভাবক
জানান, এর আগে সব সময় টিকাদান কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করত রেড ক্রিসেন্ট-এর
স্বেচ্ছাসেবকেরা। তখন সব কিছু নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হতো। রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা
সবাইকে সারিবদ্ধভাবে টিকাদান কক্ষে প্রবেশ-বাহিরে সহযোগিতা করেছে। তবে আজ তারা কী কারণে যেন ধর্মঘট করছে। ফলে পরিস্থিতি এতটা বিশৃঙ্খল। আমাদের খুব ভোগান্তি হচ্ছে।
বাগেরহাট সরকারি
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিয়া রহমান বলেন, ‘দুই
ঘণ্টা চেষ্টা করে টিকাদান কক্ষের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড চাপে দম বন্ধ হয়ে
যাচ্ছিল, তাই আবার বের হয়ে এসেছি। জানি না আজকে টিকা দিতে
পারব কি না। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের এক সহপাঠী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
ওই শিক্ষার্থীর
মা লিলি জামান বলেন, ‘যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে আজ টিকা দিতে পারব
না। মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।’
টিকা নিতে সকাল
৯টায় এই কেন্দ্রে আসা সদরের কাড়াপাড়া এলাকার রহিমা বেগম (৬২) বেলা সোয়া ১১টার দিকে
অসুস্থ হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আশপাশের লোকেরা তাকে ধরে নিয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতে বসান।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। টিকা পাচ্ছি না। এই বয়সে
এসে এমন ভোগান্তি তো শরীরে সহ্য হয় না।’
দ্বিতীয় ডোজের
টিকার জন্য আসা কান্দাপাড়া এলাকার আয়সা বেগম বলেন, ‘গত শনিবারও
একবার এসে ফিরে গেছি। টিকা দিতে পারিনি। আজও মনে হচ্ছে ফিরে যেতে হবে।’
রেড ক্রিসেন্ট
বাগেরহাট ইউনিটের যুব প্রধান শরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘করোনার টিকাদান
শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমরা নিরলসভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও
বিভিন্ন সময়ে আমাদের হুমকি-ধমকি শুনতে হয়।’ তবে কর্মবিরতি বা স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ
বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
টিকা কেন্দ্রের
অব্যবস্থাপনা ও টিকা না পাওয়ার বিষয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন
আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা হবে বলে
সংযোগ কেটে দেন।
তবে নাম প্রকাশ
না করার শর্তে রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মী বলেন, ‘টিকা কেন্দ্রে
নিয়মশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কাজ করলে প্রভাবশালীদের কথা শুনতে হয়। আপনারা সিভিল
সার্জনকে ফোন করার পর তিনিও আমাদের যুবপ্রধানকে ফোন করে বেশি বেশি কথা
শুনাইছে।’
সরকারি বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কবীর হোসেন আকন বলেন, শিক্ষার্থীদের
টিকা গ্রহণে বিশৃঙ্খলার কথা শুনে আমরা সেখানে যাই। প্রচণ্ড চাপে আমাদের কয়েকজন
শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত সমস্যা
সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
বাগেরহাটের জেলা
প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে
মানুষের সেবা দিচ্ছে। তারপরও কেউ কেউ তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এটা কোনোভাবেই
কাম্য নয়। সবাইকে নিয়ম মানতে হবে, এই দায়িত্ব সবার। যখনই টিকাগ্রহীতাদের কেউ কেউ নিয়ম মানতে বা ধৈর্য ধরতে রাজি হন না, স্বাভাবিকভাবেই
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সবাইকে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন জেলা
প্রশাসনের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২০
নভেম্বর থেকে বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
এস/এম. জামান