প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২১, ০৬:৪০ এএম
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান মোছা. শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডপ্রধান সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির অর্থ লেনদনের ভাউচার দেখে এটাই প্রমাণিত হয়, তারা প্রতিষ্ঠানটির অনেক টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।’
রোববার
(১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে বোর্ডের ৮ম সভা শেষে
এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
গত
১৮ অক্টোবর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনার জন্য আপিল বিভাগের
সাবেক বিচারপতি এএইচএম
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের
বোর্ড গঠন করে দেন
হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট
বেঞ্চ এ বোর্ড গঠন
করেন।
সভায়
উপস্থিত বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন,
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন
বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল
আহসান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর
মিলন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী
ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম
আজিজ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে
মাহবুব কবীর মিলন বর্তমানে
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বোর্ডপ্রধান শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ’যে সব ভাউচার
পাওয়া গেছে সেখানে কাকে,
কেন টাকা দেয়া হয়েছে
সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো কিছু জানা
সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়িক নিয়ম-নীতির বাইরে একরকম ইচ্ছে
মতো এসব ভাউচার তৈরি
করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা
করছি, আগের যে এমডি
ও চেয়ারম্যান ছিলেন তারা বিদেশে টাকা
পাচার করেছেন।’
বাড়ির
মালিকের কাছ থেকেও জানা
গেছে এমডি মোহাম্মদ রাসেল
ও চেয়ারম্যান মোছা. শামীমা নাসরিন প্রতি মাসেই দুবাই যেতেন। এটাও এই সন্দেহ
(টাকা পাচার) প্রমাণের ক্ষেত্রে বড় একটা উপাদান
হিসেবে কাজ করবে। কোন
দেশে কত টাকা পাচার
হয়েছে তদন্তে তা বের হলে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় তা ফিরিয়ে আনার
চেষ্টা করা হবে। তবে
তা সহজ হবে না
বলেও জানান তিনি।
হাইকোর্টের
বিধিনিষেধের কারণেই ইভ্যালির কোনো পণ্য বা
সম্পদ এই মুহূর্তে কাউকে
দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির কী
পরিমাণ সম্পদ ও দায় রয়েছে
তা এখনও নিশ্চিত হওয়া
যায়নি। তবে পাওনাদার ও
পাওনার পরিমাণ এতো বেশি যে
শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে তা
কিছুই বোঝা যাচ্ছে না
বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি
জানান, ইভ্যালির মালিকানায় থাকা পিকআপ, কারসহ
২২টি গাড়ির কথা জানা গেছে।
গাড়িগুলো উদ্ধার বা জব্দে বিআরটিএ'র সহযোগিতা চেয়ে
এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাওয়া
যায়নি। গাড়িগুলো আটকে দিতে পুলিশকেও
বলা হয়েছে।
কোম্পানির
বেহাল অবস্থার উল্লেখ করে সাবেক এই
বিচারপতি বলেন, ‘ল্যাপটপসহ অনেক মালামাল চুরি
হয়ে গিয়েছে। রাসেল বা ভবনের মালিক
কারও কাছেই তিনটি সিন্দুকের পাসওয়ার্ড পাওয়া যায়নি। শিগগিরই গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই সিন্দুকগুলো ভাঙা
হবে। অর্থকড়ির হিসাব মেলাতে ঋণ বা বেতন
বাবদ অগ্রিম টাকা নেয়া কর্মীদের
চিঠি দিয়ে ডাকা হবে।
তবে, সেখানে সমস্যা হলো- অনেক কর্মীই
ফৌজদারি মামলার আসামি, যারা পালিয়ে আছেন।
এরপরও যারা পাওনাদার তাদের
কাগজপাতিগুলো যত্নে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে
যে কয়েকজন কর্মীকে হাইকোর্টের নির্দেশনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে বা যাদের অব্যাহত
রাখা হয়েছে, তাদের বেতন ও বোর্ডের
নিয়মিত কাজ পরিচালনা করার
মতো অর্থও এই মুহূর্তে নেই।
কারণ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো সব জব্দ করে
রাখা হয়েছে। তবে, সিটি ব্যাংকে
ইভ্যালির অনুকূলে থাকা অল্প কিছু
টাকা শিগগিরই পাওয়ার ব্যাপারে আশার কথা জানান
তিনি। কারণ, এই ব্যাংকটি এভাবে
টাকা আটকে রাখতে পারে
না বলে উল্লেখ করেন
সাবেক এই বিচারপতি।
এদিকে হাইকোর্ট নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ৮৬ লাখ টাকা চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ-সম্পদের হিসাবের কাজ শুরু করেছে নিয়োগ পাওয়া অডিট কোম্পানিটি। এই কাজ শেষ করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। কারণ, কাগজপত্রের খুবই বেহাল দশা। অনেক কাগজপাতি চুরি হয়ে গিয়েছিল বা গিয়েছে, অনেক কাগজপাতি বস্তাবন্দি অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখনও জানা সম্ভব হয়নি সব কাগজ আছে কিনা। ব্যাংক থেকেও হিসাব চাওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে সম্পদের হিসাব শেষ করতে পারলে তবেই হাইকোর্টের নির্দেশে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। তখনই আসলে জানা যাবে, ইভ্যালি আবার চালু হবে নাকি বন্ধই হয়ে যাবে।
এআরআই/ডা