প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২১, ০১:৩৩ এএম
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে
মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার সময় এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর হাত থেকে ফুল
কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। এতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অপমানিত
বোধ করে তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে থানাহাট এইউ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে মাঠ প্যারেড শেষে উপজেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জীবিত ১৯৫ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ফুলেল শুভেচ্ছা পর্বে বজরা তবকপুর ফৈলামারী এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর স্ত্রী রেজিয়া বেওয়ার হাতেও ফুল দেয়া হয়। ফুল দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান উপস্থিত উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা বেগমকে সেই ফুলটি ফেরত নিতে বলেন। এ সময় বাধ্য হয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তার হাত থেকে ফুলটি নিয়ে নেন। জনসম্মুখে ফুল ফেরত নেয়ার ঘটনায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেওয়া অপমানিত বোধ করে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের কিসামত বানু এলাকার রহমত আলী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শহীদ হন। দেশ স্বাধীনের পর একমাত্র সন্তান এরশাদুল আলমকে নিয়ে রেজিয়া বেওয়া পিতার বাড়ি একই ইউনিয়নের বজরা তবকপুর ফৈলামারী গ্রামে চলে যান। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুমোদিত বিভিন্ন তালিকায় রহমত আলীর নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শহীদ পরিবারটি নিয়মিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে মাসিক ৩০ হাজার করে ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে। ভাতা বহির ক্রমিক নং-শ-কুড়ি-১০৩৪৮।
রেজিয়া বেওয়া বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে তিনি অনুষ্ঠানে যান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফুলেল শুভেচ্ছা পর্বে তাকেও ফুল দিয়ে ফুলটি কেড়ে নেয়া হয়। সে সময় অপমানিত বোধ করায় সেখান থেকে চলে আসেন তিনি।’
তার ছেলে এরশাদুল আলম বলেন, ‘সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার মাকে অপমানিত করা মানে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকেই অপমানিত করা। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আসমা বেগম এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওই নারীকে ফুলটি দেয়ার পর ইউএনও সাহেব তা ফেরত নেয়ার জন্য বারবার বলায় আমি ফুল ফেরত নিয়েছি।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর বিক্রম শওকত আলী বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তবে আমার চোখের সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই বিষয়ে কেউ আমাকে অবগতও করেনি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফুল ও কম্বল দেয়া হয়েছে।’ যারা আসেনি তাদেরকে পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জেডআই/এম. জামান