প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২১, ১২:০২ এএম
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণচেষ্টা ও
নির্যাতনের মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও বাদীর
আইনজীবী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে ভুক্তভোগী সেই গৃহবধূ জানিয়েছেন তিনি রায়ে
সন্তুষ্ট নন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বাদী গৃহবধূ বলেন, ‘আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। তাদের যেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। হাইকোর্ট থেকে যেন তারা জামিন না পান, এটাই আমার কথা।’
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) ১২টা ১০ মিনিটে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ অভিযোগপত্রভুক্ত ১৩ আসামির সবাইকে কারাদণ্ড দিয়েছেন নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) জয়নাল আবেদীন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- নুর হোসেন বাদল, আবদুর রহিম ওরফে রহিম, সামছুদ্দিন ওরফে সুমন, মোহাম্মদ আলী ওরফে আবু কালাম, ইস্রাফিল হোসেন ওরফে মিয়া, মাঈন উদ্দিন ওরফে সাজু, আবদুর রব ওরফে চৌধুরী মিয়া ওরফে লম্বা চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, জামাল উদ্দিন ওরফে প্রবাসী জামাল, নুর হোসেন ওরফে রাসেল, মিজানুর রহমান ওরফে তারেক, আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহাগ ও দেলোয়ার হোসেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি মামুনুর রশিদ। বাদীর পক্ষে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাছুল ও কল্পনা রানী দাস। আর আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আবদুল কাইয়ুম, জসিম উদ্দিন ও মো. আলী সহিদ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪–১৫ জন দুর্বৃত্ত জোর করে গৃহবধূর ঘরে ঢোকেন। তারা ঘরে থাকা নারী ও স্বামীকে মারধর, নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা এবং পুরো ঘটনাটি ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখেন। ওই ঘটনার পর দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা ওই নারীকে পুনরায় অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে ওই নারী রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের ৩২ দিন পর গত বছরের ৪ অক্টোবর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নির্যাতনের ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে গত বছরের ৪ অক্টোবর রাতে দেলোয়ার বাহিনীর ৯ সদস্যের নাম উল্লেখ করে বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। তারা তদন্তে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। যাদের মধ্যে এজাহারনামীয় আসামি আটজন আর এজাহারের বাইরের আসামি ছয়জন। পরে আদালত ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
জেডআই/ডা