প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১, ০৪:৫১ পিএম
বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম
গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, সেই
নামটি হচ্ছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (বেগম রোকেয়া)।
ঊনবিংশ শতকে নারীরা যখন অবরোধবাসিনী, সেই সময় নারীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন বেগম রোকেয়া। এই উপমহাদেশে মুসলিম নারীর যে অগ্রগতি তা অর্জনে রোকেয়ার দর্শন ও কর্মময় জীবন অন্তহীন প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তার দেখানো পথে হেঁটে নারীরা আজ দেশের শীর্ষ পদ দখল করলেও পথপ্রদর্শকের জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে নির্মিত স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন আর অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাই দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছে রোকেয়াপ্রেমী ও স্থানীয়দের মাঝে।
বৃহস্পতিবার
(৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে গিয়ে দেখা যায়, অন্ধকারে
পড়ে আছে বেগম রোকেয়া
স্মৃতিকেন্দ্রটি। এখানে ঘুরতে এসে শিক্ষণীয় বা
রোকেয়া সম্পর্কিত তেমন কিছু দেখতে
না পেয়ে হতাশ রোকেয়াপ্রেমীরা।
অন্যদিকে সংরক্ষণের অভাবে রোকেয়ার জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষ ক্রমেই মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। একটি জানালা ও কয়েকটি পিলার এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রতি বছর রোকেয়া দিবসকে ঘিরে মেলার আয়োজন হলেও এবার করোনার কারণে তা হচ্ছে না। তবে স্মৃতিকেন্দ্রে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কারসহ রাস্তাগুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। তিন একর ১৫ শতক জমির ওপর নির্মিত স্মৃতি কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায় বেশির ভাগ রুমের জানালার কাচ ভাঙ্গা। অনেক রুমের দেয়ালে পড়ে আছে শেওলা। সেই সঙ্গে ধুলোয় মোরানো ছিল রুমের ভেতরের জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
জানা
যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে
১৯৯৭ সালে রোকেয়ার বসতিটা
রংপুরের পায়রাবন্দে গড়ে ওঠে বেগম
রোকেয়া গবেষণা ও স্মৃতিকেন্দ্র।
কিন্তু মাঝে চারদলীয় জোট
ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবহেলা আর ভ্রান্তনীতির কারণে
এর প্রাণ সঞ্চার হয়নি। এর অবকাঠামো পড়ে
আছে অনেকটা অনাদর-অবহেলায়। সর্বশেষ বাংলা একাডেমিকে হস্তাস্তর করায় বর্তমানে এ
কেন্দ্রে কর্মরত আছেন একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিকসহসহ পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
স্মৃতিকেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রেজাউল করিম জীবন বলেন, `রোকেয়ার বাড়িকে ঘিরে যে স্মৃতিকেন্দ্রটি করা হয়েছে এখানে ভবন আছে, অনেক রুম আছে, সবুজ গাছপালা আছে, পুকুর আছে লাইব্রেরি আছে। শুধু এসবেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু রোকেয়াকে জানার যে জায়গা, শেখার যে জায়গা সেরকম কিছু নেই। সৃজনশীল কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি এ স্মৃতিকেন্দ্রে।
আরেক দর্শনার্থী আফ্রিদা জাহিন বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্রে রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য ছাড়া দেখার কিছুই নেই। এখানকার লাইব্রেরিতে রোকেয়া সম্পর্কিত পর্যাপ্ত বইও নেই।
পায়রাবন্দ
রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল সিটি নিউজকে বলেন,
‘রোকেয়া দিবসে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে অনুষ্ঠান করে
চলে যান। পরে আর
কেউ স্মৃতিকেন্দ্র ও রোকেয়ার জন্মভিটার
খোঁজ নেয় না।’ আন্তরিকতার
জায়গা থেকে রোকেয়া দিবস
সেভাবে পালন হয় না
দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর সরকার রোকেয়া পদক দিচ্ছে। রোকেয়াকে সম্মান জানিয়ে দিবস পালন করছে। আমার কাছে মনে হয় এসব নিছক আনুষ্ঠানিকতা। কেননা রোকেয়ার বাড়ি যে রংপুর এটা বোঝার উপায় নেই। রংপুরে পায়রা চত্বর আছে, শাপলা চত্বর আছে কিন্তু রোকেয়া চত্বর নেই সেইভাবে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য নেই।‘
দুলাল
বলেন, ‘পায়রাবন্দে রোকেয়াকে জানার যে আগ্রহ, প্রত্যাশা
নিয়ে মানুষ ছুটে আসে সেই
প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে
রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি আরও সৃজনশীলভাবে গড়ে
তুলতে হবে। সেই সঙ্গে
জন্মভিটার ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করতে হবে। রোকেয়ার
দেহবশেষ ভারত থেকে নিয়ে
আসতে হবে এবং বেদখলে
থাকা রোকেয়া পৈত্রিক সাড়ে তিনশ বিঘা জমি উদ্ধার
করতে হবে।’
রোকেয়ার ভাতিজি (বৈমাত্রিয় ভাইয়ের মেয়ে) রনজিনা সাবের সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, 'আমার শেষ জীবনে একটা চাওয়া-ভারত থেকে বেগম রোকেয়ার মরদেহ যেন নিয়ে এসে পায়রাবন্দের মাটিতে সমাহিত করা হয়। আমরা তার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে চাই।‘
বেগম
রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্যাহ
আল ফারুক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার
পর থেকে নানা প্রতিকূলতা
গিয়েছে। এখন স্মৃতি কেন্দ্রটি
সমৃদ্ধ করতে আমরা উদ্যোগ
গ্রহণ করেছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আলোর মুখ
দেখবে স্মৃতি কেন্দ্রটি।’
নূর/এএমকে