প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২১, ০৯:৩৭ পিএম
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের
প্রভাবে মাদারীপুর জেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদের মধ্য কৃষকের রোপণকৃত আমন ধান ও বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজিসহ খেসারি ডালের
অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বল্প আয়ের কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত ৪ ডিসেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত জেলার সর্বত্র ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে পাকা আমন ধানসহ সকল ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের ধান বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে নষ্ট হচ্ছে।
তারা আরও জানান, চলতি অর্থ বছরে রবি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৫ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমির রবি ফসল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষি অফিসের মাঠ কর্মীরা এ ক্ষতি নিরূপণ করতে মাঠে রয়েছে। ৪/৫ দিনের মধ্যই সম্পূর্ণ ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা যাবে।
অফিসের তথ্য মতে, ক্ষতিগ্রস্ত রবি ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ ১ হাজার ৭৫ হেক্টর, রসুন ১ হাজার ২০৫ হেক্টর, কালোজিরা ৪৩০ হেক্টর, আলু ৪০ হেক্টর, ভুট্টা ৫৩ হেক্টর, মিষ্টি আলু ১৪ হেক্টর, গম ৬০২ হেক্টর, সরিষা ২ হাজার ৯৫, মসুর ২ হাজার ১৫২, খেসারি ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর, মাসকলাই ৪৫ হেক্টর, ধনিয়া ৪২০ হেক্টর, মরিচ ৮০ হেক্টর, শাকসবজি ৬৯৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ১৬১ এবং অন্যান্য ৬০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি এলাকার কৃষক সেলিম মল্লিক বলেন, ‘এবার আমার ও বর্গা মিলে ১০ বিঘা জমিতে রসুন-পেঁয়াজ চাষ করেছি। কেবল চারা গজাইছে। কিছুদিন পরে ফসল ঘরে আনতে পারতাম কিন্তু জমিতে পানি জমে সব শেষের পথে। এখন আমাদের মরণ ছাড়া কিছু নাই। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা না করলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।’
চরজানাজাত এলাকার কৃষক নওয়াব আলি বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টিতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল। এবার তিন বিঘা জমিতে ছোলা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টি যদি আবারও আসে তাহলে অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছি।’
একই এলাকার কৃষক নান্নু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি মসুর, খেসারি, রসুন, পেঁয়াজ ও সরিষা চাষাবাদের জন্য বিখ্যাত। এই এলাকায় যারা যা কিছু চাষ করেছে এই ঘূর্ণিঝড়ের পানিতে তা তলিয়ে গেছে। এতে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানি না সরলে নতুন করে আর ফসলও চাষ করা যাবে না।’
মাদারীপুর কৃষি অফিসের প্রধান প্রশিক্ষক এসএম সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও শস্যের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। আমরা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অফিসারেরা ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করতে চেষ্টা করছি যাতে কোনো ঘাটতির সম্ভাবনা থাকলে সহজেই সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেদের বীজ, সার ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকি কার্যক্রম থেকেও কৃষকদের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।’
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মাদারীপুরে বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি, মসুর ও সরিষাসহ আমন ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখনও পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি। তবে আক্রান্তের পরিমাণ নির্ণয় করা গেছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করব।’
জেডআই/ডাকুয়া