
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ০৯:৫৬ পিএম
রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড়
জাওয়াদের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মাদারীপুরবাসী। তিন দিন
ধরেই বাতাসের সঙ্গে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। আর টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে স্থবিরতা নেমে
এসেছে মাদারীপুরের জনজীবনে। হেমন্তের এই দিনে ঝরছে শ্রাবণের ধারা। মনে
হচ্ছে এ যেন বর্ষাকাল! আর টানা বৃষ্টিতে বিপাকে মাদারীপুরের সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার (৪
ডিসেম্বর) সকাল থেকে জেলাজুড়ে শুরু হয় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। যা গত দুই দিনে রূপ নেয়
অবিরাম বৃষ্টিপাতে। বৃষ্টির কারণে জেলার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা, বিশেষ
করে শিবচর উপজেলার চর জানাজাত, বন্দোরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, সন্ন্যসীরচর
ইউনিয়নের জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এসব এলাকা পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় পানি
জমে গেছে বিভিন্ন গ্রামে। ফলে অঞ্চলটির দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষদের আয়রোজগার
বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে
খাওয়া মানুষ।
এ ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে গবাদি পশু নিয়েও অনেকে বিপাকে পড়েছেন। গতকাল রোববার সকাল থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা বেড়ে যায়। ফলে চরম ভোগান্তি উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অপরদিকে বৃষ্টি আর শীতের কারণে আটকা পড়ায় অনেককেই কিছুটা বিলম্বে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে।
এদিকে দিনভর
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে লঞ্চ, ফেরি
চলাচল করলেও বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলে
নিষেধাজ্ঞা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে লঞ্চ, ফেরি
ও স্পিডবোট চলছে। তবে বৃষ্টির কারণে যাত্রীরা স্পিডবোটের পরিবর্তে লঞ্চ ও ফেরিতে
পারাপার হচ্ছে।
অসময়ের বৃষ্টিতে
ভোগান্তিতে পড়েছে মাদারীপুরের প্রায় সকল উপজেলার মানুষ। বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে যাওয়া
ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শীতের
গরম জামাকাপড় পরে ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন
জেলাবাসী।
এদিকে গত তিন দিন কাজ না থাকায় চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে খেঁটে খাওয়া মানুষেরা। সকালে কমেছে বৃষ্টি। কিন্তু তিন দিন ধরেই আকাশে মেঘ থাকায় দেখা মিলছে না সূর্যের। বৃষ্টির কারণে জেলার সর্বত্র দেখা দিচ্ছে অচলাবস্থা। বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় শহরের রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। বৃষ্টির মধ্যে যারা জরুরি কাজের জন্য বের হয়েছেন তাদের অনেককেই গরম কাপড় ও রেইনকোট পরতে দেখা গেছে।
এদিকে তিন দিন
ধরেই বৃষ্টিতে বন্ধ জেলা ও উপজেলা শহরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। কাজকর্ম না
পেয়ে চায়ের দোকানে অলস সময় পার করছেন দিনমজুর ও শ্রমিকেরা। ইতোমধ্যেই তিন দিনের
বৃষ্টির কারণে মাঠে থাকা বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে রবিশস্য
চাষাবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিবচর উপজেলার
জানাজাত এলাকার কৃষক শাহ আলম জানান, তিন দিন ধরে মাঠে কাজ করতে
পারেননি তিনি। ফলে তার কাছে গচ্ছিত টাকাও শেষ। ছয়জনের সংসারে তিনিই একমাত্র আয়
করেন। তিনি এখন কী করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না।
শিবচর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান, তিন দিন ধরে দোকান খুলি। এক টাকাও বিক্রি হয়নি। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ আছে। কোনো কাস্টমার আসে না। এভাবে চলতে থাকলে বিপদে পড়তে হবে।
বাঁশকান্দি
এলাকার কৃষক সাইফুল আলম জানান, কয়েকদিন আগে ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ-রসুন
রোপণ করেন তিনি। ইতোমধ্যে সব ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে
পেঁয়াজ-রসুন ক্ষেতে পানি জমে সব পচে যাবে।
পাঁচ্চর বাসস্টান্ডে কথা হয় আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা যাওয়ার
উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। এ কারণে অটোরিকশা ও
রিকশার ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি। বৃষ্টি যেভাবে হচ্ছে তাতে ভিজে ভিজে ভেঙে ভেঙে ঢাকা
যেতে হবে।’
বিআইডব্লিউটিএর
বাংলাবাজার লঞ্চ টার্মিনালের টিআই আক্তার হোসেন বলেন, 'দুই দিন ধরে
প্রচুর বৃষ্টি। এর আগের দিনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও
যাত্রীর সংখ্যা খুব কম। কোনো কোনো লঞ্চে ধারণক্ষমতার তিন ভাগের এক ভাগ যাত্রী
নিয়েই চলাচল করছে।’
এস/এম. জামান